
মরুভূমির পঙ্গপাল – এক উপেক্ষিত, ছোট্ট পতঙ্গ। ফসলখেকো বিপর্যয়ের প্রতীক হিসেবে যাকে এতদিন চিনে আসা, সে-ই আজ বিজ্ঞানকে চমকে দিচ্ছে তার মাতৃত্বের এক বুদ্ধিদীপ্ত গোপন অস্ত্র দিয়ে। শুষ্ক বালির নীচে, পঙ্গপাল মা রেখে যায় এক উপহার – জীবনদায়ী টিফিন কৌটো। মা পঙ্গপাল যখন ডিম পাড়ে, তখন সে শুধু ভবিষ্যতের সন্তান রেখে যায় না, সঙ্গে দিয়ে যায় এক আঠালো, পুষ্টিকর, জীবাণুনাশক থকথকে পদার্থ। এই জৈব তরল পদার্থ ডিমগুলিকে জড়িয়ে ধরে, মাটি ও মরুভূমির অতিরিক্ত তাপে শুকিয়ে যাওয়া থেকে বাচ্চাগুলিকে সুরক্ষা দেয়। শুধু খাবারের যোগান নয়, এ একধরনের জৈবিক বর্ম, পুষ্টির গোপন ঘর, এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার অস্ত্র গার ! আমেরিকার জৈব পদার্থবিদ লুইস রুইজ এবং তার গবেষণা দল সুদানের মরুভূমিতে পঙ্গপালের এই রহস্যময় টিফিন বাক্স নিয়ে গবেষণা করেন। রুইজ বলেন, “পঙ্গপাল মা যেন নিজের শরীর থেকে এক প্রাকৃতিক প্রযুক্তি বার করে তার সন্তানদের হাতে তুলে দেয়, যা তাদের জীবনে বাঁচার প্রথম পাঠ ।” তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ডিম এই থকথকে পদার্থে মোড়া থাকে, সেগুলিই বেঁচে থাকে। অন্যদিকে, যেগুলো এই জৈব তরলের ছায়া সাইকোলজি না সেগুলি শুষ্কতায় মারা যায়। এই থকথকে মিউকাস শুধু রসদ নয়, এর মধ্যেই থাকে কিছু বিশেষ উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এগুলি বাচ্চার অন্ত্রে গিয়ে হজম প্রক্রিয়া চালু করে এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়া একেবারে বৈপ্লবিক। এতদিন ধরে পতঙ্গদের বিবর্তনীয় আচরণ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, কিন্তু এমন এক প্রজনন প্রক্রিয়া যা মরুভূমির বুকে এত সুকৌশলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের রক্ষক হতে পারে, তা ছিল কল্পনার বাইরে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই কঠিন সময়ে, যেখানে খরা আর অনাবৃষ্টির ছায়া ঘন হচ্ছে, সেখানে পঙ্গপালের এই জৈব কৌশল বিজ্ঞানীদের সামনে তুলে ধরছে এক নতুন দিক। ক্ষুদ্র প্রাণীরাও তাদের প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখার জন্য উদ্ভাবন করে নিজস্ব প্রযুক্তি, যেটি প্রকৃতি নিজের হাতে তৈরি করেছে। এই গবেষণা শুধু পতঙ্গজগতকে নতুন চোখে দেখতে শেখায় না বরং ভবিষ্যতের কৃষি প্রযুক্তি, টেকসই পরিবেশ রক্ষণ এবং জৈব প্যাকেজিং নিয়ে নতুন ভাবনার দরজা খুলে দেয়।