চীনের মন্দিরে প্রাচীন বৃক্ষ সংরক্ষণ

চীনের মন্দিরে প্রাচীন বৃক্ষ সংরক্ষণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ জুন, ২০২৫

সম্প্রতি কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে চীনের বহু প্রাচীন গাছ মন্দির প্রাঙ্গণে নিরাপদ আশ্রয় পেয়েছে। চীন এবং অস্ট্রেলিয়ার একদল পরিবেশবিদ, উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও বন সংরক্ষণকর্মী যৌথভাবে প্রায় ৫০,০০০ প্রাচীন গাছের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। অধিকাংশ গাছই বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে অবস্থিত।
গবেষণায় দেখা যায়, এই গাছগুলোর মধ্যে প্রায় ৬,০০০টি বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির। কিছু গাছের বয়স ১,৫০০ বছরেরও বেশি। যেমন দামিং মন্দিরে অবস্থিত দুটি ঔষধি গাছ। এছাড়া গিংকো বিলোবা প্রজাতির বহু গাছের বয়স ১,০০০ বছরেরও বেশি। এগুলি বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তারের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে সম্পর্কযুক্ত। প্রাক -হান রাজবংশ (২৫–২২০ খ্রিস্টাব্দ) সময়কালের নথিপত্রে একটি গাছের অস্তিত্বের প্রমাণও পাওয়া গেছে।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল, গবেষকেরা ৮টি এমন গাছের প্রজাতি শনাক্ত করেছেন যেগুলো এখন বিশ্বের অন্য কোথাও আর দেখা যায় না—শুধু এই মন্দিরগুলোর মধ্যেই টিকে আছে। এর মধ্যে একটি হলো কার্পিনাস পিউতোএনসিস , যার একমাত্র জীবিত নমুনাটি সংরক্ষিত রয়েছে চীনের ঝোশান দ্বীপপুঞ্জের হুইজি মন্দিরে।

গবেষণার মূল বিশ্লেষণ বলছে, ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতি প্রাচীন গাছ সংরক্ষণের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। বৌদ্ধ ও তাওবাদী ধর্মে গাছপালার আধ্যাত্মিক গুরুত্ব দেওয়া হত, যা এই গাছগুলোর প্রতি যত্ন ও সুরক্ষার মনোভাব গড়ে তোলে। বহু সন্ন্যাসী ও উপাসক এই গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে নিবেদিত থাকেন। তাছাড়া মন্দিরের স্থপতিরাও এমন গাছ পছন্দ করেন যেগুলোর আয়ু দীর্ঘ হয়, যেমন—গিংকো বিলোবা।

যদিও এই গাছগুলো সংখ্যায় সীমিত, কিন্তু পরিবেশগত ও জিনগত দিক থেকে তাদের গুরুত্ব বিশাল। তারা বিপন্ন প্রজাতিগুলোর জন্য একধরনের জীবন্ত জিনের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করছে।

এই গবেষণা আমাদের সামনে প্রমাণ করে যে, ধর্মীয় স্থানগুলি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে। প্রাচীন গাছগুলোর টিকে থাকা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাদের সংরক্ষণে মন্দিরভিত্তিক উদ্যোগ এক অনবদ্য কীর্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × two =