
ছত্রাক যে কিনা সোনা খেতে ভালোবাসে! অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন এক ধরনের ছত্রাক, যার নাম ফিউসারিয়াম অক্সিস্পোরাম বা Fusarium oxysporum। মাইসেলিয়াম হল সূক্ষ্ম সুতোর মতন জিনিস যা ছত্রাককে পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে। এই ছত্রাকের ক্ষেত্রে বিপাকের মাধ্যমে সোনার সাথে এরা এমন ভাবে নিজস্ব আন্ত ক্রিয়া ঘটাতে তে সক্ষম যা অনেকেই অসম্ভব বলে মনে করেন। এই ছত্রাক মাটিতে থাকা সোনার কণা খুঁজে, সেটিকে নিজের গায়ে জমিয়ে নেয় এবং দ্রুত বেড়ে ওঠে। বিপাকীয় পথের মাধ্যমে এরা অজৈব কণাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে। পরিবেশ থেকে এরা এমনভাবে শক্তি গ্রহণ করে, যা তাদের সোনা জমাতে উৎসাহ যোগায়। অবশ্য এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত উৎসেচকগুলিকে এখনো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন এই অনুজীবগুলি ধাতব আয়ন কমাতে এবং সোনাকে স্থিতিশীল অতি ক্ষুদ্র কণার আকারে ধরে রাখার জন্য নির্দিষ্ট পলিস্যাকারাইড এবং প্রোটিন নিঃসরণ করে। ছত্রাকের শরীরে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণেই এরা সোনার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং শরীরের তন্তুতে জমিয়ে রাখে। বিজ্ঞানী ড. সিং বোহু বলেন, “সোনা এতটাই নিষ্ক্রিয় যে এর সঙ্গে কোনও ছত্রাকের এভাবে মিশে যাওয়া খুবই আশ্চর্যের।” এই প্রক্রিয়ায় ছত্রাক শুধু বড় হয় না, বরং নিজের প্রজননক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে। ভবিষ্যতে নতুনভাবে খনি খোঁজার কাজে এই ছত্রাক উপযোগী হতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। বড় বড় যন্ত্রপাতি দিয়ে মাটি না খুঁড়ে, এই ছত্রাককে মাটিতে ছড়িয়ে দিয়েই জানা যাবে মাটির নীচে কোথাও সোনা আছে কিনা। এছাড়া মহাকাশ গবেষণাতেও এ আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, এই ছত্রাককে মহাকাশে পাঠিয়ে সোনায় ভরা গ্রহাণু থেকে সহজেই ধাতু সংগ্রহ করা যাবে। এই আবিষ্কার খনি শিল্পে পরিবেশবান্ধব এক নতুন দিশা খুলে দিয়েছে। ছত্রাক দিয়ে সোনা খুঁজে পাওয়ার কল্পনা একসময় অসম্ভব মনে হত, কিন্তু এখন সেটা বাস্তব হতে চলেছে। এই ‘স্বর্ণভুক ‘ ছত্রাক একদিন হয়তো এমন একটি প্রযুক্তিতে পরিণত হবে, যার সাহায্যে পৃথিবীর গভীর থেকে শুরু করে মহাকাশ- সর্বত্রই এই মূল্যবান ধাতুর খোঁজ মিলবে।