সংগ্রহশালার নমুনায় পরিবেশের ক্ষতচিহ্ন

সংগ্রহশালার নমুনায় পরিবেশের ক্ষতচিহ্ন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ জুন, ২০২৫

সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত পুরনো প্রাণীর দেহাবশেষ, যেমন পাখির পালক বা মাছের কঙ্কাল, এখন আর শুধুমাত্র জৈব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রমাণ নয়। এগুলো হয়ে উঠছে ইতিহাসের দূষণ চিহ্নের নীরব সাক্ষ্য। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই সংরক্ষিত উদ্ভিদ ও প্রাণী সংগ্রহশালার সংগ্রহে থেকে দূষণের ঐতিহাসিক ছাপ বহন করছে।

গবেষক ড. দুবে এবং তার দল আবিষ্কার করেছেন যে, শত বছর আগে সংগৃহীত প্রাণীর মধ্যে এখনো বায়ু বা জল দূষণের ধাতু ও কণার চিহ্ন রয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯০৬ সালে সংগৃহীত একটি ফিল্ড স্প্যারো পাখির পালকে দেখা গেছে কালো কার্বনের আস্তরণ, যা কয়লা ভিত্তিক দূষণের ফল। অপরদিকে, ১৯৯৬ সালের একটি একই প্রজাতির পাখির পালকে তা অনুপস্থিত, যা দূষণের পরিবর্তন নির্দেশ করে।

গবেষণাটি দূষণের ইতিহাসকে নতুন ভাবে দেখতে সাহায্য করে। অতীতে পরিবেশে দূষণের মাত্রা পরিমাপের কোনো ব্যবস্থা ছিল না, ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সমস্যার উৎস নির্ধারণ করা কঠিন। কিন্তু সংগ্রহশালার এই নমুনা এখন ঐতিহাসিক দূষণের স্তর নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে যদি স্থানীয় চিকিৎসা রেকর্ডের সঙ্গে দূষণের এই তথ্য মিলিয়ে দেখা যায়, তাহলে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, জন্মজনিত সমস্যা বা মানসিক সমস্যার সঙ্গে দূষণের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

যদিও এই নমুনাগুলো দূষণ বিশ্লেষণের জন্য সংগৃহীত হয়নি, তবুও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প ক্ষতির মধ্য দিয়ে তথ্য সংগ্রহের উপায় তৈরি হচ্ছে। তবে বিষয়টি জটিল। যেমন এমন কিছু অঞ্চল আছে যার কোনো নমুনা নেই, আবার কিছু কিছু নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি নমুনার ক্ষতি করতে পারে।

এই গবেষণা প্রমাণ করে যে প্রাকৃতিক ইতিহাসের সংগ্রহশালাগুলি কেবল প্রজাতির বিবর্তনের নয়, মানব সভ্যতার পরিবেশগত প্রভাবের একটি দীর্ঘমেয়াদি রেকর্ডও বহন করে। এক শতাব্দী আগের বাতাস, জল ও মাটির গুণগত মান আজও এসব জীবাশ্মে লুকিয়ে আছে।
এই নমুনাগুলি আমাদের শেখায় যে অতীত এখনো কথা বলে, শুধু সে কথা বোঝার জন্য একটা সচেতনতা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − three =