নোঙর-বিক্ষত সাগরতল জীবন

নোঙর-বিক্ষত সাগরতল জীবন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ জুন, ২০২৫

কুমেরু অঞ্চলের সাগরতলে জাহাজ নোঙর ফেলার ফলে সংরক্ষিত সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পর্যটন, গবেষণা ও অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য এখন কুমেরু অঞ্চলে জাহাজ চলাচল বাড়ছে, এবং প্রতিটি নোঙর ফেলা এই স্পর্শকাতর পরিবেশে স্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি করছে।

এই প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা কুমেরু অঞ্চলে জলের নীচে নোঙর ফেলার প্রভাব ভিডিও ফুটেজে রেকর্ড করেছেন। গবেষণার নেতৃত্ব দেন KOLOSSAL সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সামুদ্রিক বিজ্ঞানী ম্যাথিউ মুলরেনান। তিনি বলেন, কুমেরু অঞ্চলে সংরক্ষণ নীতিমালা থাকলেও জাহাজের নোঙর ফেলা প্রায় অনিয়ন্ত্রিত। নিউজিল্যান্ডের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড অ্যাটমোসফিয়ারিক রিসার্চের ড. স্যালি ওয়াটসনও এর গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বলেন, এ নিয়ে গবেষণা অনেক আগেই শুরু হওয়া উচিত ছিল।

২০২২-২৩ সালের গ্রীষ্মকালে, গবেষকরা কুমেরু উপদ্বীপীয় অঞ্চল ও সাউথ জর্জিয়া দ্বীপের ৩৬টি স্থানের ফুটেজ নিয়েছেন।ক্যামেরাগুলি বিভিন্ন গভীরতায় স্থাপন করা হয়েছিল , সমুদ্র-পৃষ্ঠের কাছাকাছি, মাঝে এবং সমুদ্রের তলদেশ থেকে মাত্র এক মিটার উপরে। তাঁরা দেখেন, যেখানে নোঙর ফেলা হয়েছে, সেখানে সাগরের তলদেশে গভীর দাগ, কাদার আস্তরণ ,স্পঞ্জ উপনিবেশ চূর্ণ-বিচূর্ন হয়ে গিয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে বেন্থিক জীবভর প্রায় অস্তিত্বহীন । এই এলাকাগুলোতে সামুদ্রিক জীব প্রায় অনুপস্থিত, কিন্তু কয়েক মিটার দূরেই জীববৈচিত্র্য অক্ষত। এর অর্থ, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা স্থানীয় এবং সাম্প্রতিক।

গবেষকরা তিনটি প্রাচীন দৈত্যাকার আগ্নেয়গিরি স্পঞ্জকে প্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখেন, যাদের বয়স ১৫,০০০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও বিপদের মুখে রয়েছে কুমেরু অঞ্চলের অক্টোপাস, সান স্টার, সামুদ্রিক মাকড়শাসহ নানা মাছ, যাদের আবাসস্থল জলের গভীরে।

এই ক্ষতি শুধু কিছু প্রজাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং পুরো সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে এর প্রভাব পড়ে। স্পঞ্জ যেমন জল পরিশোধন, কার্বন শোষণ এবং অন্যান্য প্রাণীর আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে, ঠিক তেমনি পেঙ্গুইন ও সীলের মতো প্রাণীর জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।

কুমেরু অঞ্চলের শীতল পরিবেশে জীবের বৃদ্ধি ধীর, তাই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, এমনকি কয়েক দশক পর্যন্ত। গবেষকরা বলেন, এই প্রভাব বোঝার জন্য কোনো বৈশ্বিক সংগৃহীত তথ্যতালিকা নেই। এটা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। মুলরেনানের মতে, এটি একটি অবহেলিত অথচ তাৎপর্যপূর্ণ পরিবেশগত সমস্যা, যা আশু সমাধানের দাবি রাখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + 18 =