
তুষার যুগে, যখন পুরো গ্রহ গভীর বরফের নিচে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল, তখন কীভাবে এবং কোথায় জীবন টিকে ছিল? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সম্প্রতি এম আই টি -র এক গবেষণা মারফত জানা গেছে, বরফের উপর ছোট ছোট গলিত জলাধার ছিল সে সময় জীবনের অন্যতম আশ্রয়স্থল।
৬৩৫ থেকে ৭২০ মিলিয়ন বছর আগে, ক্রায়োজেনিয়ান সময়কালে পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চল বরফে আবৃত ছিল। তখন বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ছিল -৫০ডিগ্রী সেলসিয়াস। সে সময় কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে বরফের উপরকার ধুলো ও অন্যান্য বায়বীয় কণার কারণে তাপ শোষণ বাড়ে। ফলে স্থানীয় বরফ গলে যায় এবং ছোট ছোট জলাধার তৈরি হয়। ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রায় এই প্রক্রিয়াটি প্রাথমিক জীবনের জন্য বাসযোগ্য বরফ গলা জলের পরিবেশ তৈরি করতে পারে। গবেষকদের মতে, এসব বরফ গলা জলাধারেই টিকে ছিল ইউক্যারিওট বা আধুনিক কোষযুক্ত জীবের পূর্বসূরীরা, যারা পরবর্তীতে বহুকোষী জীবনের বিকাশ ঘটায়।
এই ধারণার সপক্ষে বাস্তব উদাহরণ খুঁজতে গবেষক দল বর্তমান অ্যান্টার্কটিকার ম্যাকমার্ডো আইস শেলফ এলাকায় ছোট ছোট বরফ গলা জলাধারগুলোতে গবেষণা করেন।এই জলাধারগুলির প্রতিটি মাত্র কয়েক ফুট গভীর এবং কয়েক মিটার প্রশস্ত। সেখানে তাঁরা প্রতিটি জলাধারেই ইউক্যারিওট জীবনের উপস্থিতি পান। গবেষণায় দেখা যায়, লবণাক্ততার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন জলাধারে ভিন্ন ভিন্ন জীববৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে।
এখানকার জলাধারগুলোর নীচে মাইক্রোবিয়াল ম্যাট নামক ঘন জীবাণু স্তর পাওয়া যায়, যা সায়ানোব্যাকটেরিয়া(নীলাভ সবুজ শৈবাল) নামক এককোষী জীব দ্বারা তৈরি। গবেষকরা শুধু সায়ানোব্যাকটেরিয়া নয়, বরং জটিল ইউক্যারিওট জীব, যেমন শৈবাল, প্রোটিস্টা এবং অতি ক্ষুদ্র প্রাণীর উপস্থিতিও শনাক্ত করেন।
তাঁরা স্টেরল নামক লিপিড এবং রাইবোজোমাল আর এন এ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এসব জীবের পরিচয় নির্ধারণ করেন এবং প্রত্যেক জলাধারে ভিন্ন ভিন্ন জীববৈচিত্র্য খুঁজে পান। এই গবেষণা প্রমাণ করে, বরফের ওপরের এসব জলাধার তুষারযুগেও জীবনের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করেছে। এসব আশ্রয়স্থলে জীবন টিকে থাকার কারণেই পরবর্তীতে পৃথিবীতে জটিল জীবন গড়ে উঠেছে, যার ধারাবাহিকতা আমরা আজও বহন করছি।
গবেষণাটির অন্যতম লক্ষ্য ছিল, কীভাবে কঠিন পরিবেশেও দৃঢ়তার অসাধারণ প্রমাণস্বরূপ জীবন টিকে থাকার ক্ষমতা দেখিয়েছে, তা বোঝা।