পক্ষাঘাতের চিকিৎসায় নতুন প্রযুক্তি

পক্ষাঘাতের চিকিৎসায় নতুন প্রযুক্তি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ জুলাই, ২০২৫

পক্ষাঘাত হল একপ্রকার দৈহিক বিকার যাতে মাংশপেশী স্বাভাবিক কাজ করে না, দুর্বল বা শিথিল (অথবা প্রকারভেদে আড়ষ্ট) হয়ে থাকে। এতে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অচল হয়ে পঙ্গুত্ব আসতে পারে। পক্ষাঘাত একটি দুটি পেশীতে হতে পারে আবার, এক বা একাধিক অঙ্গে কি বা পুরো শরীরে হতে পারে। অনেক সময়ই পক্ষাঘাতের সঙ্গে অবশতা অর্থাৎ স্পর্শ অনুভূতির অভাব হতে পারে, কিন্তু সবসময় নয়। এটি অন্য রোগের উপসর্গ হতে পারে, অথবা একাই একটি ভয়াবহ রোগ হতে পারে। আবার পক্ষাঘাত খুব মৃদু এবং স্বল্পমেয়াদী হতে পারে যা আমরা প্রায় টেরও না পেতে পারি। দেখা গেছে গড়ে পঞ্চাশ জনের মধ্যে একজনের অল্পবিস্তর পক্ষাঘাত আছে।
সম্প্রতি নিউ জিল্যান্ডের ওয়াইপাপা তাউমাতা রাউ, অক্ল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুইডেনের চ্যামার্স ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির এক দিগদর্শী গবেষণা পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য নতুন আশার আলো দেখিয়েছে। গবেষকরা এমন এক অতি পাতলা অঙ্গপ্রতিস্থাপনযোগ্য কৃত্রিম যন্ত্রাংশ তৈরি করেছেন, যা আহত মেরুদণ্ডে সরাসরি মৃদু বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহিত করে। এই বৈদ্যুতিক সংকেত প্রাকৃতিকভাবে স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়ক সংকেতের অনুকরণ করে, ফলে স্নায়ু পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। দেখা গেছে, আহত ইঁদুররা এই চিকিৎসার মাধ্যমে হাঁটাচলার ক্ষমতা এবং স্পর্শ অনুভূতি ফিরে পেয়েছে, কোনোরকম প্রদাহ বা বাড়তি ক্ষতি ছাড়াই। গবেষণার নেতৃত্ব দেন অক্ল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি স্কুলের গবেষক ড. ব্রুস হারল্যান্ড। তিনি জানিয়েছিলেন মানুষের ত্বক কেটে গেলে স্বাভাবিকভাবে দেহকোষ বিভাজনের মাধ্যমে তা নিরাময় হয়, কিন্তু মেরুদণ্ডের ক্ষত নিজে নিজে ঠিক হয় না। ফলে এরকম আঘাত মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
বিশেষ করে মানবশিশুর ভ্রূণ অবস্থায় এবং আংশিকভাবে জন্মের পরে,স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা সেই প্রাকৃতিক বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়াকেই পরীক্ষাগারে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। গবেষকরা তৈরি করেছেন অতি পাতলা একটি কৃত্রিম দেহাঙশ, যা ইঁদুরের আহত মেরুদণ্ডের উপর নির্দিষ্ট জায়গায় স্থাপন করা হয়।
এই যন্ত্র দৈনিক নির্দিষ্ট মাত্রায় বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সরবরাহ করে, যা কিনা স্নায়ু পুনর্গঠনে বিশেষভাবে সহায়ক। গবেষণায় দেখা যায়, ইঁদুরদের মধ্যে যারা নিয়মিত এই বৈদ্যুতিক চিকিৎসা পেয়েছে, তারা চার সপ্তাহ পর অন্যদের তুলনায় বেশি চলাফেরা করতে সক্ষম হয়েছে এবং বারো সপ্তাহের মধ্যে তাদের স্পর্শের প্রতিক্রিয়াও উন্নত হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই চিকিৎসায় মেরুদণ্ডে কোনো প্রদাহ বা ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যা প্রযুক্তিটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

গবেষকরা বলেন পরবর্তী ধাপে ভিন্ন মাত্রা, ভিন্ন শক্তি, ভিন্ন সময়কাল এবং কম্পাঙ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ কিভাবে পুনরুদ্ধারে প্রভাব ফেলে তা বিশ্লেষণ করা হবে। তাঁরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি মানুষের জন্য কার্যকর চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 5 =