অতিভোজী ব্ল্যাক হোল

অতিভোজী ব্ল্যাক হোল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ জুলাই, ২০২৫

PG1211+143 হলো একটি অতিবৃহৎ ব্ল্যাক হোল, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ১.২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এর ভর সূর্যের ভরের প্রায় ৪ কোটি গুণ বেশি। এই ব্ল্যাক হোল অত্যন্ত সক্রিয়, অবিশ্বাস্য গতিতে এর মধ্যে পদার্থ প্রবেশ করছে। মাত্র পাঁচ সপ্তাহ ধরে পর্যবেক্ষণের সময়, XMM-Newton এক্স-রে অবজারভেটরি দেখতে পেয়েছে, এই ব্ল্যাক হোল ১০টি পৃথিবীর সমান ভরকে গ্রাস করতে পারে, মানে বছরে ১০০টিরও বেশি পৃথিবীর ভর এটি গ্রাস করে। ব্ল্যাক হোলে ভারী বস্তুর প্রবেশের ঘটনটিকে বিজ্ঞানীরা রসিকতার সুরে বলেন এ যেন এক মহাভোজ। কয়েকদিন পর, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন ব্ল্যাক হোলের কিনারা থেকে প্রচণ্ড গতিতে পদার্থ বেরিয়ে আসছে ঘণ্টায় ১৮১ মিলিয়ন মাইল (২৯১ মিলিয়ন কিমি) বেগে, যা আলোর গতির এক-চতুরথাংশ। এ ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা খানিক কৌতুক করে বলেন ব্ল্যাক হোল থেকে নির্গত পদার্থগুলো যেন এই দৈত্যাকার ব্ল্যাক হোলটির ঢেকুর। যেন ভারী বস্তুকে আহার করে ব্ল্যাক হোলটির ঢেকুর উঠছে পদার্থ নির্গমনের মাধ্যমে।
আসলে যেটা ঘটে তা হলো, প্রচুর পরিমাণে পদার্থ ব্ল্যাক হোলের দিকে পড়ে যাওয়ার কারণে এর চারপাশে থাকা ঘূর্ণায়মান গ্যাস ও ধূলিকণার সঞ্চয়ন-চাকতিটি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যেমনটা রকেট বা বারুদের ক্ষেত্রে ঘটে। এই অতিরিক্ত উত্তাপ একটি বিস্ফোরণের মতো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যার ফলে প্রচণ্ড শক্তিশালী বিকিরণ হয় এবং সেই বিকিরণের ধাক্কায় আশপাশের পদার্থ অবিশ্বাস্য গতিতে দূরে ছিটকে পড়ে। বিজ্ঞানীরা এর গভীরতর প্রভাব নিয়েও খুবই আগ্রহী। বিশেষ করে, এই ধরনের শক্তিশালী পদার্থ বেরিয়ে যাওয়ার কারণে আশেপাশের গ্যালাক্সি কীভাবে তার তারকা তৈরির কাঁচামাল হারায়, এবং কীভাবে এই প্রক্রিয়া একটি গ্যালাক্সিকে তারকা উৎপাদনের কেন্দ্র থেকে ধীরে ধীরে নীরব-নিশ্চুপ অবস্থায় নিয়ে যায়, তা বোঝার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 + 7 =