স্পেস ট্র্যাভেলিংয়ের ভাবনা থেকে হয়ত এই ভাবনারও উৎপত্তি। কোটিপতি জেফ বাজোসের অরবিট রিফ নামক ‘মহাকাশে বিজনেস পার্কের আলোচনার পরই হয়ত নতুন এই ভাবনার সৃষ্টি। মহাকাশে কেউ মারা গেলে তার দেহে কি পচন ধরতে পারে?
বিশ্বের কোটিপতি ব্যবসায়ী, কোম্পানিগুলো যেভাবে মহাকাশে উপগ্রহ পাঠাচ্ছে, মঙ্গলের মত অন্যান্য গ্রহে অভিযানের উদ্যোগ নিচ্ছে, এমনকী যেভাবে সাধারণ নাগরিকদের রকেটে চাপিয়ে মহাকাশে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে ‘বড় দিন বা পুজোর ছুটির আগে বিজ্ঞাপন করা হতেই পারে, চাঁদে চলুন, এক রাত দু’দিন! অথবা একসঙ্গে দু’টো বা তিনটে গ্রহ থেকে ঘুরে আসার ভ্রমণ প্যাকেজের কথাও বলা হতে পারে! জেফ বাজোসের ব্লু অরিজিন তো নাগরিকদের জন্য ইতিমধ্যে টিকিট কেটে মহাকাশে ভ্রমণের ব্যবস্থা করে ফেলেছে। মহাকাশে বিজনেস পার্ক তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। আর ইলন মাস্ক? তার স্পেস এক্স ভাবছে মঙ্গল গ্রহে ভবিষ্যতে বসতি স্থাপন করা যায় কী না! তাই মহাকাশে থাকার কথা মানুষ যখন ভাবতে শুরু করে দিয়েছে, তাহলে সেখানে থাকতে থাকতে কেউ মারা গেলে তার দেহ নিয়েও ভাবনা আসাও স্বাভাবিক।
পৃথিবীতে কেউ মারা যাওয়ার পর তার মরদেহ রেখে দিলে কয়েক ধাপে পচন শুরু হয়। শুরুতেই রক্তের প্রবাহ বন্ধ হয়ে মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে এক জায়গায় জমা হতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়া লিভর মর্টিস নামে পরিচিত। এরপর দেহটি ঠাণ্ডা হয়ে অ্যালগর মর্টিস অবস্থায় পৌঁছে পেশিতন্তুতে ক্যালসিয়ামের অনিয়ন্ত্রিত গঠনের জন্য মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাবে। এই অবস্থার নাম রিগর মর্টিস। এরপর কোষপ্রাচীর ভেঙে ভেতরের উপাদান বেরিয়ে আসে। একইসঙ্গে অন্ত্র থেকে ব্যাকটিরিয়া বেরিয়ে সারা শরীর ছড়িয়ে পড়ে। সেগুলো সারা শরীরের নরম টিসুগুলিকে গ্রাস করে যেভাবে গ্যাস নির্গত করে তাতে শরীর ফুলে যায়। রিগর মর্টিস পর্যায়ে শক্ত হওয়া মাংস এই পর্যায়ে এসে নরম হয়ে যায়, কড়া গন্ধ বেরতে থাকে এবং নরম টিসুগুলো ভেঙে যায়। এটা হল পচনের সহজ প্রক্রিয়া। তবে পচনের প্রক্রিয়ায় আরও অনেক কিছু প্রভাব ফেলে, যেমন তাপমাত্রা, পোকামাকড়, মরদেহ মুড়িয়ে রাখা, জল বা আগুনের উপস্থিতি ইত্যাদি। আবার আবহাওয়া শুকনো থাকলে দেহের মমিকরণও হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নরম কোষ সম্পূর্ণ ভেঙে কঙ্কাল বেরিয়ে আসবে। কঙ্কাল কিন্তু নাছোড়বান্দা এক উপাদান। কখনও কখনও হাজার বছরও থেকে যায়!
মহাকাশে মৃত্যু হওয়ার প্রসঙ্গে, ইংল্যান্ডের টিসাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টিম থম্পসন বলছেন, মাধ্যাকর্ষণ বল না থাকলে রক্তের একজায়গায় জমা হওয়া শুরু হবে না। শরীরে স্পেস স্যুট থাকলে রিগর মর্টিস প্রক্রিয়া সচল থাকবে। অন্ত্রের ব্যাকটিরিয়াও নরম টিসুগুলোকে গ্রাস করে নেবে। তবে ব্যাকটিরিয়াগুলোর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন। তাই বায়ুপ্রবাহ সীমিত থাকলে পচনের প্রক্রিয়াও ধীরে ধীরে হবে। পৃথিবীর তুলনায় ভিন্ন পরিবেশে পচনের ক্ষেত্রে বাহ্যিক প্রভাবগুলোর কাজের প্রক্রিয়াগুলো জটিল হয়ে যাবে। যেমন কঙ্কালের ক্ষেত্রে। বেঁচে থাকার সময় হাড়ও জীবন্ত অবস্থায় থাকে। এতে রক্তনালি ও কোলাজেনের মত জৈব উপাদানও যেমন থাকে আবার ক্রিষ্টালের মত অজৈব পদার্থেরও অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে অন্য গ্রহের মাটিতে অ্যাসিড বেশি থাকলে উল্টোও হতে পারে। পচনে তাপমাত্রার প্রভাবও কম নয়। যেমন চাঁদের তাপমাত্রা ১২০ ডিগ্রি থেকে শূন্যের চেয়ে ১৭০ ডিগ্রি কমও হতে পারে।
মোট কথা, কনভারসেশন ডটকমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টিম থম্পসন জানিয়েছেন মৃত্যুর পরও মানুষের দেহের আকৃতি মানুষের মতই থাকবে। পচনের পুরো প্রক্রিয়া পৃথিবীতে যেভাবে হয় সেরকম হবে না।