
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টারের গবেষকরা মঙ্গলের মাটিতে এমন কিছু ঢেউ সদৃশ ভূমিরূপ খুঁজে পেয়েছেন, যা পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল অঞ্চলগুলিতে দেখা যায়। এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন গবেষক জনপল স্লেইমান এবং সহকারী অধ্যাপক ৱ্যাচেল গ্লেড। তাঁদের গবেষণা থেকে জানা যায়, মঙ্গলের মাটির এই ঢেউ আকৃতির নিদর্শনগুলো অনেকটাই পৃথিবীর কুমেরু অঞ্চল বা রকি পর্বতমালার সলিফ্লাকশন লোবস নামক ভূমিরূপের মতো দেখতে।
সলিফ্লাকশন লোবস পৃথিবীতে সাধারণত শীতল পার্বত্য অঞ্চলগুলিতে দেখা যায়, যেখানে মাটির উপরিভাগ জমে যায় এবং আংশিকভাবে গলে আবার শক্ত হয়, ফলে মাটি ধীরে ধীরে নিচের দিকে গড়িয়ে যায়। ঠিক একই রকম ঢেউয়ের মতো ভূমিরূপ মঙ্গলেও দেখা গেছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, মঙ্গলে এই ভূমিরূপগুলো পৃথিবীর তুলনায় গড়ে ২.৬ গুণ বেশি উঁচু। গবেষকদের মতে এর কারণ, মঙ্গলের মাটির ভিন্ন গঠন এবং মঙ্গলের কম মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। কম মাধ্যাকর্ষণের কারণে মঙ্গলের মাটি বেশি উচ্চতায় জমে উঠতে পারে, ভেঙে পড়ার আগেই।
তবে পৃথিবীতে বরফ গলে জল তৈরি হয় এবং সেই জল মৃত্তিকার সঞ্চালনে ভূমিকা পালন করে। কিন্তু মঙ্গলে বিজ্ঞানীদের ধারণা, সেখানে বরফ সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় অর্থাৎ বিজ্ঞানের পরিভাষায় আমরা যাকে বলি ঊর্ধ্বপাতন। এর ফলে মাটির উপরিভাগের কাঠামো ঢেউয়ের মতো তৈরি হয়। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, মঙ্গল একসময় বরফে ঢাকা ছিল এবং সেখানে পৃথিবীর মতোই জমাটবদ্ধ বরফ থেকে জলের চক্রাকার আবর্তন ঘটে থাকতে পারে।
এই গবেষণা মঙ্গলের অতীত জলবায়ু, বরফের উপস্থিতি এবং সম্ভবত জীবনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন তথ্য সামনে এনেছে। গবেষক স্লেইমান বলেন, এই ধরনের ভূমিরূপ কীভাবে তৈরি হয় তা বুঝতে পারলে শুধু মঙ্গলের নয়, অন্য গ্রহের পরিবেশ এবং জীবন ধারণের উপযোগিতার বিষয়ে বড় ধরনের তথ্য পাওয়া সম্ভব।
এই গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক জার্নাল ইকারাসে প্রকাশিত হয়েছে। তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, এই নিদর্শনাগুলো ঠিক কত বছর আগে তৈরি হয়েছিল তা নির্দিষ্টভাবে জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবুও, এই আবিষ্কার মঙ্গলের গঠনতাত্ত্বিক ইতিহাস এবং ভবিষ্যতে অন্য গ্রহে জীবনের সন্ধান প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।