বাষ্পীভবনের নতুন ব্যাখ্যা

বাষ্পীভবনের নতুন ব্যাখ্যা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ জুলাই, ২০২৫

এতদিন আমরা সূর্যালোককে বাষ্পীভবনের প্রাকৃতিক কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে জেনে এসেছি। অর্থাৎ বিশাল পরিমাণ জলরাশি সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে সূর্যের তাপ বাষ্পীভবনের আসল চাবিকাঠি নয়, বরং সূর্যের আলোতে থাকা দোদুল্যমান বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রই মূলত জলের বাষ্পীভবনকে ত্বরান্বিত করে।

এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন এনসি স্টেটের পিএইচ ডি গবেষক সাকলাইন রাজা। তিনি বলেন, সূর্যের আলোতে থাকা বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র জলের অণুগুলোর সঙ্গে বিশেষভাবে ক্রিয়া করে, ফলে সেগুলো সহজেই বাতাসে মিলিয়ে যেতে পারে। গবেষক দল কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে জলের বাষ্পীভবনের এই প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করেন। এতে দেখা যায়, সূর্যের আলোতে থাকা বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র জলের পৃষ্ঠে থাকা অণুগুচ্ছকে ভেঙে দেয়, তাই জল সহজেই বাষ্পীভূত হতে পারে।
আবার, তাপমাত্রা বাড়ানোর মাধ্যমে সাধারণভাবে জলের বাষ্পীভবন বাড়ানো যায়, তবে গবেষণায় দেখা যায় শুধুমাত্র তাপ দিলে বা হাইড্রোজেল ব্যবহার করলেও বাষ্পীভবনের হার বাড়ে না। হাইড্রোজেল হল এক ধরণের পলিমার সংযোগ শৃঙখল যা প্রচুর পরিমাণ জল শুষে নিয়ে থকথকে রূপ ধারণ করতে পারে। হাইড্রোজেল জলের গঠন পরিবর্তন করলেও তার প্রভাব খুব সামান্য। আসল তফাৎ আসে যখন বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র প্রয়োগ করা হয়।
আরও দেখা যায়, দোদুল্যমান বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র প্রয়োগ করা হলে হাইড্রোজেল যুক্ত জলের বাষ্পীভবনের হার ২.৩ গুণ এবং সাধারণ জলের ক্ষেত্রে ১.৪৪ গুণ বেড়ে যায়। বৈজ্ঞানিকরা জানান, জলের অণু এককভাবে বা গুচ্ছ হিসাবে জলপৃষ্ঠ ত্যাগ করে, এই গুচ্ছ ভাঙতে এবং বাষ্পীভবন বাড়াতে সূর্যালোকের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র অত্যন্ত কার্যকর।
অণুগুচ্ছ গঠনে হাইড্রোজেল সহায়তা করে বটে, কিন্তু সেটি শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের উপস্থিতিতেই কার্যকর হয়। এ গবেষণা আলোক আনবিক ক্রিয়া, অর্থাৎ আলোর মাধ্যমে জলের অণু বা তার গুচ্ছকে বিচ্ছিন্ন করার তত্ত্বকে আরও জোরালো করে।

এই গবেষণা সৌরশক্তি দ্বারা জলের বিশুদ্ধকরণ এবং সাশ্রয়ী জলবাষ্পীভবন প্রযুক্তি তৈরির নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত উপকরণ এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই প্রযুক্তি উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − fifteen =