
বিস্ময়কর এক খনিজ-আবিষ্কার, সৌরজগত গঠনের ইতিহাস-বোধ বদলে দিতে পারে। জাপানের হায়াবুসা২ মহাকাশযান ২০২০ সালে পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনেছিল রিয়ুগু গ্রহাণু থেকে কিছু প্রাচীন ধূলিকণা। অনেক বিজ্ঞানী বলছেন এটি সাধারণ কোনো খনিজ নয়। বরং এ যেন এক কালাধার বা ‘সময়-ক্যাপসুল’ – -সৌরজগতের জন্মলগ্নের সাক্ষী। রিউগু একটি কার্বন-সমৃদ্ধ গ্রহাণু, যার গঠন আগে একরকমের ভাবা হয়েছিল। কিন্তু হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল সম্প্রতি যা পেয়েছেন, তা এই ধারণায় বড়সড় বদল আনছে। ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের তীক্ষ্ণ চোখে ধরা পড়ে এক অদ্ভুত খনিজ- ডজারফিশেরাইট। এটি একটি পটাশিয়াম-যুক্ত লোহা-নিকেল সালফাইড। এটি সাধারণত তীব্র উচ্চতাপ ও অক্সিজেন-শূন্য পরিবেশে তৈরি হয় । আগে কখনো রিউগু বা একই জাতীয় সিআই কন্ড্রাইট মেটিওরাইটে বা পাথুরে মহাজাগতিক বস্তুতে এ জিনিস দেখা যায়নি। বরং এ ধরনের খনিজ মেলে ‘ইনস্টাটাইট কন্ড্রাইট’ নামে একদম আলাদা এক প্রজাতির উল্কাপিণ্ডে, যারা সৌরজগতের একেবারে ভিতরের অংশে তৈরি হয়। “এ যেন কুমেরুর বরফে খেজুর গাছের বীজ পাওয়ার মতন” – বললেন গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক, অধ্যাপক মাসাআকি মিয়াহারা। খনিজটি পাওয়া গেছে ১৫ নম্বর নামাঙ্কিত ধূলিকণায়, যা C0105-042 নামক নমুনা পাত্র থেকে সংগৃহীত। প্রশ্ন উঠছে, যে গ্রহাণুর অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি নয় সেখানে এই উচ্চতাপের খনিজ এল কীভাবে?
উঠে আসছে দুটি সম্ভাবনা:
ক। বহিরাগত উৎস- রিউগুর পিতৃগ্রহ যখন গঠিত হচ্ছিল, তখন হয়তো দূর-দূরান্ত থেকে কোনও ভিন্ন গ্রহাণু থেকে এই খনিজ এসে মিশে যেতে পারে।
খ। অভ্যন্তরীণ গঠনে পরিবর্তন- কোনও এক সময় রিউগুর তাপমাত্রা হয়তো ৩৫০°সে ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যাতে ‘ডজারফিশেরাইট’ খনিজটি নিজেই তৈরি হয়ে যেতে পারে।
বর্তমানের তথ্য-প্রমাণ দ্বিতীয় সম্ভাবনাকেই বেশি সমর্থন করে। এই আবিষ্কার শুধু রিউগুর নয়, বরং গোটা সৌরজগত গঠনের কাহিনীতে নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। প্রাচীন গ্রহাণুগুলি যে আসলে কত বিচিত্র এবং কত মিশ্র উপাদান নিয়ে তৈরি-তা বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা এখন তৈরি হচ্ছেন সমস্থানিক সাক্ষ প্রমাণের লক্ষ্যে। তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে রিউগুর অন্যান্য ধূলিকণার রাসায়নিক-আইসোটোপ বিশ্লেষণ।