
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক বিড়ালই বাঁ পাশ ফিরে ঘুমাতে বেশি পছন্দ করে। ইউটিউব-এ প্রকাশিত কয়েক শতাধিক বিড়ালের ঘুমানোর ভিডিও বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এই তথ্য তুলে ধরেছেন। তাঁদের মতে, এই নির্দিষ্ট পাশের প্রতি পক্ষপাত সম্ভবত বিবর্তনের একটি রূপ। এটি বিড়ালদের দ্রুত শিকার ধরা বা হঠাৎ বিপদে পালানোর দক্ষতা বাড়িয়ে তোলে। গবেষণাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন ইতালির ইউনিভার্সিটি অব বারি আলদো মোরো, জার্মানির রুর ইউনিভার্সিটি বোচুম, মেডিকেল স্কুল হ্যামবার্গ, এবং কানাডা, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্কের একাধিক গবেষক।
বিড়ালরা সাধারণত দিনে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুমায়। ঘুমের সময় প্রাণীরা সবচেয়ে বেশি অসহায় বোধ করে। বিড়ালরা বিপদমুক্ত থাকতে, উঁচু জায়গায় ঘুমাতে পছন্দ করে, যেখানে শত্রুর আক্রমণের সম্ভাবনা কম। এই ঘুমের ধরণ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ড. সেভিম ইস্পারতা এবং অধ্যাপক অনুর গুনতুরকুন একটি প্রশ্ন তুলেছিলেন: বিড়ালরা ডান না বাঁ পাশে শুতে বেশি পছন্দ করে? তারা ৪০৮টি ইউটিউব ভিডিও বেছে নেন। সেগুলিতে একটি করে বিড়ালকে অন্তত দশ সেকেন্ড ধরে এক পাশে শুয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এদের শরীর সম্পূর্ণ দৃশ্যমান ছিল। কোনো ধরনের সম্পাদিত বা মিরর করা ভিডিও বাদ দেওয়া হয়। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেন, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিড়ালই বাঁ পাশে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। কেন এই বাঁ পাশে শোওয়ার প্রবণতা? গবেষকদের মতে, বাঁ পাশ ফিরে ঘুমালে বিড়ালটি জেগে ওঠার সময় তার চারপাশের জগতকে বাম চাক্ষুষ ক্ষেত্র (left visual field)-এর মাধ্যমে উপলব্ধি করে। এই তথ্য মস্তিষ্কের ডান গোলার্ধে প্রক্রিয়া ঘটায়। ডান গোলার্ধ সাধারণত পরিসর সচেতনতা , বিপদে সাড়া দেওয়া, ও দ্রুত পালানো প্রভৃতি কাজগুলিতে সহায়ক। অর্থাৎ, যদি কোনো বিড়াল বাঁ কাঁধে ভর দিয়ে শুয়ে থাকে, তবে হঠাৎ শিকার বা শত্রুকে দেখতে পেয়ে সে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা উঠে আসে: ঘুমের ভঙ্গিমা কেবল আরাম নয়, বরং টিকে থাকার জন্য বিবর্তনের একটি কৌশলও হতে পারে। বাঁ পাশ ফিরে শোওয়া হয়তো বিড়ালদের মস্তিষ্কের এমন একটি কৌশল তৈরি করছে যা তাদের জীবন রক্ষায় সাহায্য করে। এই গবেষণা ভবিষ্যতে পশুদের ঘুম ও স্নায়ুবিজ্ঞান নিয়ে আরও গভীর অনুসন্ধানের পথ খুলে দিচ্ছে।