
“আমরা এই উপলক্ষে কথা বলছি, কোনো বিশেষ জাতি, মহাদেশ, বা ধর্মবিশ্বাসের সদস্য হিসেবে নয়, বলছি মানুষ হিসেবে, মানব প্রজাতির সদস্য হিসেবে—যে প্রজাতির অস্তিত্ব থাকবে কিনা তা নিয়ে এখন সন্দেহ দেখা দিয়েছে।“
এই কথাগুলি বলা হয়েছিল ১৯৫৫ সালের ৯ জুলাই, আজ থেকে ৭০ বছর আগে পারমাণবিক অস্ত্রের বিপদ সম্পর্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনে। পরবর্তীতে এটি ‘রাসেল-আইনস্টাইন ঘোষণাপত্র’ নামে বিখ্যাত হয়।
পারমাণবিক বোমা হিরোশিমায় ফেলার পর, বিজ্ঞানী জোসেফ রটব্লাট আসন্ন পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। নৈতিক কারণে তিনি আগেই পরমানু বোমা বানানোর ম্যানহাটান প্রকল্প ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। ১৯৫৪ সালে তিনি বিবিসির একটি হাইড্রোজেন বোমা বিষয়ক টিভি অনুষ্ঠানে বার্ট্রান্ড রাসেলের সঙ্গে পরিচিত হন।
রটব্লাট ও রাসেল পারমাণবিক বিস্তার রোধে কাজ শুরু করেন, কারণ তাঁদের বিশ্বাস ছিল—যেহেতু বিজ্ঞানীরাই পারমাণবিক বোমা তৈরি করেছেন, তাই মানবতাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করাও তাঁদেরই দায়িত্ব। তাঁরা আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে রাসেল–আইনস্টাইন ঘোষণাপত্র রচনায় সহযোগিতা করেন।
মৃত্যুর দিন কয়েক আগে পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ী আলবার্ট আইনস্টাইন এই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। এই ঘোষণাপত্রও সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই ‘পাগওয়াশ কনফারেন্স অন সায়েন্স অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স’-এর সূচনা হয়। পাগওয়াশ ছিলেন এক মানবতাবাদী বদান্য ব্যবসায়ী। এই সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল এমন এক বিশ্ব গঠন করা, যেখানে পারমাণবিক ও অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকবে না। যেখানে বিজ্ঞানীরা মানবজাতির অস্তিত্বের পক্ষে হুমকিস্বরূপ এইসব অস্ত্রের বিপদ বিশ্লেষণ করে তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবেন। এই উদ্যোগের জন্য
জোসেফ রটব্লাট এবং পাগওয়াশ ১৯৯৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
ওই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই আগে বা পরে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁরা হলেন—
ম্যাক্স বর্ন (পদার্থবিজ্ঞান, ১৯৫৪),পেরি ডব্লিউ. ব্রিজম্যান (পদার্থবিজ্ঞান, ১৯৪৬),আলবার্ট আইনস্টাইন(পদার্থবিজ্ঞান, ১৯২১),ফ্রেডেরিক জোলিও-কুরি (রসায়ন, ১৯৩৫),হারম্যান জে. মুলার (চিকিৎসাবিজ্ঞান, ১৯৪৬), লাইনাস পলিং (রসায়ন, ১৯৫৪; শান্তি, ১৯৬২), সিসিল এফ. পাওয়েল (পদার্থবিজ্ঞান, ১৯৫০),জোসেফ রটব্লাট (শান্তি, ১৯৯৫), বার্ট্রান্ড রাসেল (সাহিত্য, ১৯৫০),এবং হিদেকি ইউকাওয়া (পদার্থবিজ্ঞান, ১৯৪৯)।