
গত ১০০ মিলিয়ন বছরে স্তন্যপায়ীরা খাদ্যাভ্যাসে বিস্ময়কর বৈচিত্র্য দেখিয়েছে। কেউ ঘাস খায়, কেউ শিকার করে, কেউ আবার গাছের রস চুমুক দিয়ে পান করে বা সামুদ্রিক প্রাণী ধরে খায়। তবে সবচেয়ে অদ্ভুত পরিবর্তনগুলির একটি হলো পিঁপড়ে ও উইপোকা খাওয়ার অভ্যাস—যা “মির্মেকোফ্যাগি” নামে পরিচিত। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডাইনোসরের বিলুপ্তির পর অন্তত ১২ বার স্তন্যপায়ীরা পিঁপড়ে ও উইপোকা নির্ভর খাদ্যাভ্যাসে অভিযোজিত হয়েছে।
এদের এই অভিযোজন শুধু খাদ্যাভ্যাসে নয়, শারীরিক গঠনে ও আচরণে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। যেমন তাদের দীর্ঘ ও আঠালো জিহ্বা, শক্তিশালী নখ ও দাঁতের অবলুপ্তির এই অভিযোজন পিঁপড়ে ও উইপোকা নির্ভর খাদ্যাভ্যাসের জন্য উপযোগী। পৃথিবীর প্রায় ৪,০৯৯টি স্তন্যপায়ীর খাদ্যতালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রায় ২০০ প্রজাতি মাঝে মাঝে পিঁপড়ে বা উইপোকা খায়, কিন্তু মাত্র ২০টি প্রজাতির প্রধান খাদ্যই হল পিঁপড়ে ও উইপোকা।
আসলে পিপঁড়ে ও উইপোকা খাওয়ার পেছনে রয়েছে বিশেষ ধরনের শারীরিক বৈশিষ্ট্য। যেমন, ভার্মিলিঙ্গুয়া উপশ্রেণীর পিপীলিকাভুকদের দীর্ঘ জিভ আছে, যেটা প্রতি মিনিটে ১৬০ বার বাইরে- ভিতরে করা যায়। দাঁত না থাকলেও, পাকস্থলী দিয়ে তারা হাজার হাজার পোকা হজম করতে সক্ষম। ঘ্রাণশক্তির ওপর নির্ভর করে এরা খাদ্য খুঁজে পায়। তারা একেকবারে মাত্র মিনিটখানেকের জন্য খায়, যাতে তাদের সংঘবদ্ধ বসতি ধ্বংস না হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, পিঁপড়ে ও উইপোকার উত্থানেও ছিল বিশাল ইতিহাস। ক্রিটেশিয়াস যুগে এরা বিরল ছিল, কিন্তু মায়োসিন যুগে (প্রায় ২৩ মিলিয়ন বছর আগে) এরা পোকাজগতের এক-তৃতীয়াংশ হয়ে ওঠে। ধারণা করা হয়, ফুলের গাছের বিকাশ ও প্রাচীন উষ্ণ জলবায়ু তাদের বিস্তারে সহায়ক হয়েছিল।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, মাংসাশী প্রাণী যেমন কুকুর বা ভাল্লুকও বেশ কয়েকবার পিঁপড়ে-উইপোকা নির্ভর খাদ্যাভ্যাসে অভিযোজিত হয়েছে। তবে একবার এই অভ্যাসে অভিযোজিত হলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা আর পূর্বের খাদ্যাভ্যাসে ফিরে যায় না।
বর্তমানে পিঁপড়ে ও উইপোকা জৈব ভরের দিক থেকে বন্য স্তন্যপায়ীদের ছাড়িয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামাজিক কীটপতঙ্গের আধিপত্য বাড়তে থাকায়, মির্মেকোফ্যাগি স্তন্যপায়ীরা হয়তো ভবিষ্যতেও টিকে থাকার সুবিধা পাবে। গবেষক বার্ডেনের মতে, “যদি তাদের হারাতে না পারো, তবে তাদের খেয়ে ফেলো”—এই নীতিই বারবার স্তন্যপায়ীদের বিবর্তনে প্রভাব ফেলেছে।
তথ্যসূত্রঃ Evolution Journal (Volume-79 ; June,2025)