প্রাচীন মানুষের রঙিন পাথর প্রীতি

প্রাচীন মানুষের রঙিন পাথর প্রীতি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ জুলাই, ২০২৫

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাচীন শিকারি-সংগ্রাহকরা পায়ের কাছে পড়ে থাকা সাধারণ পাথরেই সন্তুষ্ট থাকত না। তারা রঙিন ও আকর্ষণীয় পাথরের খোঁজে মাইলের পর মাইল হাঁটত, বিনিময় করত অথবা নদীপথে সংগ্রহ করত।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তারা লাল জ্যাসপার, সবুজ ক্যালসেডোনি এবং কালো-সাদা চার্ট পাথর দিয়ে ছুরি, বর্শার মতো হাতিয়ার তৈরি করত। এ থেকে বোঝা যায়, তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতার পাশাপাশি নান্দনিকতা বা প্রতীকী গুরুত্বেও ছিল আগ্রহ।
জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব টিউবিংগেনের গ্রেগর ডি. বাদার ও তার দল এসওয়াতিনির চারটি প্রাচীন পুরাতাত্ত্বিক স্থান — হ্লালাখালে, সিফিসো, সিবেবে ও নকামবেনি — থেকে পাওয়া শত শত পাথরের হাতিয়ার বিশ্লেষণ করেছেন। এদের মধ্যে কিছু নিদর্শন ৪০,০০০ বছর পুরোনো।
এই বিশ্লেষণে তারা পাথরের ক্ষুদ্র নমুনা ছ্যাদা করে নিউট্রনের মাধ্যমে অবিরাম আঘাত করেন, যার ফলে এক ধরনের বিশেষ গামা রশ্মি নির্গত হয় — যা প্রতিটি পাথরের জন্য অনন্য রাসায়নিক চিহ্নের মতো কাজ করে। এরপর তারা এই চিহ্নগুলি স্থানীয় নদী ও শিলা স্তরের সাথে তুলনা করেন এবং মিল খুঁজে পান।
ফলাফল থেকে জানা যায়, সবুজ ক্যালসেডোনি ও লাল জ্যাসপার পাথরগুলো অন্তত ১২ থেকে ৬০ মাইল দূরের উৎস থেকে আনা হয়েছিল। চার্ট পাথর তো আরও দূরের এলাকা থেকে।
বাদার বলেন, কিছু পাথর হয়তো নদীপথে ভেসে আসতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ নিজেরাই এগুলো বহন করেছিল কিংবা অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে বিনিময় করেছিল। এই তথ্য প্রমাণ করে, প্রস্তর যুগের মানুষ শুধু খাবারের জন্য নয়, উপকরণ সংগ্রহের ক্ষেত্রেও দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করত।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, সময়ের সাথে পাথরের রঙের পছন্দেও পরিবর্তন এসেছে। মধ্য প্রস্তর যুগে (৪০,০০০–২৮,০০০ বছর আগে) কালো-সাদা চার্ট ও সবুজ ক্যালসেডোনি বেশি জনপ্রিয় ছিল, কিন্তু পরবর্তী প্রস্তর যুগে (৩০,০০০–২,০০০ বছর আগে) লাল জ্যাসপার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক পরিচয় বা আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের কারণে এই পরিবর্তন হতে পারে।
রঙিন পাথরের এই ব্যবহার শুধু প্রযুক্তি নয়, বরং মানব ইতিহাসে প্রথম দিকের ব্যবসা-বিনিময় এবং সংস্কৃতির বিস্তারের পরিচয়ও বহন করে। আজকের উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে এই গবেষণা আমাদের সেই প্রাচীন ভ্রমণকাহিনির স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।

তথ্যসূত্রঃ Journal of Archaeological Studies, 15.7.2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 3 =