
সাবমেরিন ক্যানিয়ন বা সামুদ্রিক গিরিখাত হলো সমুদ্রতলের গভীরে খোদাই করা খাড়া প্রান্তবিশিষ্ট বিশাল উপত্যকা। এগুলোর ভূমিকা শুধু ভূতাত্ত্বিক নয়। এগুলো সমুদ্রের কার্যপ্রণালী তথা সামুদ্রিক সঞ্চালন, বরফ গলন, এবং বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাকেও গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাবিত করে। একটি নতুন গবেষণায় অবশেষে সবচেয়ে কম জানা কয়েকটি ক্যানিয়নের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। এগুলো পৃথিবীর বরফাচ্ছাদিত প্রান্তের নীচে লুকিয়ে আছে। তাঁরা অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্রতল দেশে ৩৩২টি সামুদ্রিক গিরিখাতের সংযোগ শনাক্ত করেছেন। এর মধ্যে অনেকগুলো ৪,০০০ মিটারেরও বেশি গভীর।
এই গবেষণাটি করেছেন বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্ক-এর বিজ্ঞানীরা। তাঁরা IBCSO v2 নামে সবচেয়ে বেশি রেজোলিউশন যুক্ত সমুদ্র তলদেশের মানচিত্র ব্যবহার করে এই বিশ্লেষণ চালান। আধা-স্বয়ংক্রিয় এই বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে তাঁরা খাদগুলোর ১৫টি ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে পেরেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই গিরিখাতগুলো উপকূল থেকে পুষ্টিকণাকে গভীর সমুদ্রের দিকে স্থানান্তর করে, ফলে জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ একটি পরিবেশ তৈরি হয়। পৃথিবীতে প্রায় ১০,০০০ সামুদ্রিক গিরিখাত আছে বলে জানা গেলেও, এদের মাত্র ২৭ শতাংশ সমুদ্র তলদেশের উচ্চ রেজোলিউশনে মানচিত্রায়িত হয়েছে।
পূর্ব ও পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার খাদগুলোর মধ্যে গঠনগত পার্থক্য রয়েছে। পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার গিরিখাতগুলো ধীরে ধীরে হিমবাহের নিচে ক্ষয় ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে, আর পশ্চিম অংশেরগুলো বেশি খাড়া ও V-আকৃতির। এই পার্থক্য ইঙ্গিত দেয় যে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাঁদোয়া অনেক আগে তৈরি হয়েছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিকশিত হয়েছে।
এই খাদগুলো শুধু যে সামুদ্রিক শিলাস্তরকে ক্ষয় করে তৈরি হয় তা নয়। এরা বরফের চাদরের নীচে তৈরি ঠান্ডা ও ঘন জলকে গভীর সমুদ্রের দিকে ঠেলে দিয়ে বিশ্ব জুড়ে সমুদ্র সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে। একই সাথে উষ্ণ জলও এই খাদের মাধ্যমে উপকূলে পৌঁছে বরফের স্তরকে নীচে থেকে গলিয়ে দেয়। তারই ফলে হিমবাহ ধ্বসে পড়ে এবং সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।
তবে বর্তমান জলবায়ু মডেলগুলো এই ধরনের জটিল ভূপ্রাকৃতিক কাঠামোর কার্যকারিতা ঠিকভাবে ধরতে পারে না। তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন, উচ্চ রেজোলিউশনের আরও মানচিত্র ও তথ্য প্রয়োজন, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বাভাস আরও সঠিকভাবে দেওয়া যায়।
এই গবেষণা একদিকে আমাদের বরফে আচ্ছাদিত মহাদেশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা গোপন তথ্য জানার সুযোগ করে দিচ্ছে । আবার, আমাদের গ্রহের ভবিষ্যৎ বুঝতেও সহায়তা করছে।
তথ্যসূত্রঃ Marine Geology Journal ;(24.7.2025).