বন্যপ্রাণ, অপরাধ ও জিন ভিত্তিক ফরেনসিক

বন্যপ্রাণ, অপরাধ ও জিন ভিত্তিক ফরেনসিক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ আগষ্ট, ২০২৫

প্রথাগত অপরাধ তদন্তে যেমন আঙুলের ছাপ বা সিসিটিভি ফুটেজ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধে তেমন সুযোগ থাকে না। এই অপরাধে তদন্তকারীরা নির্ভর করেন রক্ত, পালক, মৃতদেহের অংশ বা মাটিতে গেঁথে থাকা ছুরি— এসব নমুনার ভিতরে লুকানো জিন ঘটিত সূত্রর উপর। হিব্রু ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় এমন একটি ফরেনসিক টুলকিটের কথা বলা হয়েছে যা এই সূত্রগুলোকে আইনি প্রমাণে রূপান্তর করতে পারে।
ড. গিলা কাহিলা বার-গাল ও তাঁর দল বন্যপ্রাণ অপরাধমূলক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধী শনাক্তকরণের নতুন পথ দেখিয়েছেন। তারা এমন এক ডিএনএ-ভিত্তিক পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যা অপরাধের নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে কার্যকর এবং আদালতে টেকসই প্রমাণ তৈরি করতে সক্ষম।
বন্যপ্রাণী পাচার বিশ্বব্যাপী পাঁচটি অবৈধ বাণিজ্যের মধ্যে অন্যতম একটি । যার বার্ষিক আয় ২৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এর প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়েছে বিপন্ন প্রজাতিগুলির উপর।
আবার, আবাসস্থল হ্রাস বা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইসরায়েলের পাহাড়ি গেজেল হরিনের সংখ্যা এখন মাত্র ৫০০০।বন্যপ্রাণীদের সংখ্যা হ্রাসে বিষক্রিয়াও একটি বড় রাশ। ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ইসরায়েলে গ্রিফন শকুনদের ৪৫% -র মৃত্যু হয় কার্বামেট বা অর্গানোফসফেট বিষের কারণে।
এই পরিস্থিতিতে জিনভিত্তিক অপরাধ তদন্ত একটি মোক্ষম অস্ত্র। ডিএনএ পরীক্ষায় প্রথমে মাইটোকন্ড্রিয়াল মার্কার ব্যবহার করে প্রজাতিটি শনাক্ত করা হয়। তারপর ডিএনএ-র নাইট্রোজেন বেসগুলোর স্বল্প অনুক্রমিক পুনরাবৃত্তি (সর্ট ট্যান্ডেম রিপিটস) পদ্ধতির মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রাণীর জিন পরিচয় তৈরি করা হয়। এমনকি মিশ্র নমুনা থেকেও লক্ষ্যবস্তুর মাত্র ১০% শনাক্তকরণ সম্ভব।
গবেষণায় কিছু বাস্তব উদাহরণও রয়েছে। যেমন, মরু অঞ্চলের এক অভিযানে বনরক্ষীরা ২১টি রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করেছিল, যার সবগুলোতেই বড়ো বাঁকানো শিং ওয়ালা পার্বত্য ছাগলের (নুবিয়ান ইবেক্সের) ডিএনএ মেলে। আরেকটি ঘটনায় প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে ছোটো হরিণ শিকার করা হলে, কুকুরের মুখ ও গাড়িতে পাওয়া পশম থেকে হরিণের ডিএনএ মেলে।
সবচেয়ে চমকপ্রদ মামলা ছিল সাতটি শকুনের বিষক্রিয়া। তদন্তে দেখা যায় তারা যে ছাগলের মাংস খেয়েছিল, সেটাই কাছাকাছি পাওয়া বিষাক্ত ছাগলের ডি এন এর সঙ্গে মেলে।
স্থানীয় ডিএনএ লাইব্রেরির ভূমিকা এই বিশ্লেষণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বৈশ্বিক ডেটাবেসে স্থানভিত্তিক তথ্যের ঘাটতি থাকায় ভুল হতে পারে। ইসরায়েলের ল্যাব অঞ্চলভিত্তিক বন্য ও গৃহপালিত প্রাণীর ডিএনএ সংগ্রহ করে এমন ভুল এড়িয়ে চলে।

ভবিষ্যতে দ্রুত তদন্তের জন্য সুবহ ডিএনএ সিকুয়েন্সার এবং কাস্টমস কর্মকর্তাদের ফরেনসিক প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বন্যপ্রাণী অপরাধ একসময় সাক্ষ্য দানে ইচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীদের উপর নির্ভর করত। কিন্তু এখন ছুরি, ব্লেড বা কাটা হাড় থেকে উদ্ধার হওয়া প্রতিটি কোষ বিপন্ন প্রজাতির কথা বলে।

সূত্র: Frontiers in Ecology and Evolution ;(24.7.25).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + one =