
সম্প্রতি জানা গেছে, কোনো অসুস্থ লোককে দেখা মাত্র আমাদের মস্তিষ্ক শরীরের রোগ-প্রতিরোধী কোষগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। সত্যিকারের সংক্রমণ হলে কোষগুলো যেমন আচরণ করে, তেমনই আচরণ করতে থাকে তারা।
আসলে সত্যিকারের সংক্রমণ হওয়া মাত্রই শরীরের রোগ-প্রতিরোধতন্ত্র সক্রিয় হয় ঠিকই, কিন্তু সবসময় তা যথেষ্ট দ্রুত সক্রিয় হতে পারে না, ফলে ভারী অসুখ করে। তাই শরীর যদি আসন্ন সংক্রমণের সম্ভাবনা টের পেয়ে সেই অনুযায়ী আগে থেকে তৈরি থাকে তাহলে সুবিধে হয়। রোগজনক জীবাণুর আক্রমণ আগে থেকে বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা শরীরের কতটা আছে তা জানবার জন্য আন্দ্রিয়া সেরিনো ও তাঁর সহকর্মীরা স্বেচ্ছাকর্মীদের মাথায় অকিউলাস রিফট নামক একটি ভার্চুয়াল হেডসেট পরিয়ে দেন। স্বেচ্ছাকর্মীরা এবার ভার্চুয়াল রিয়ালিটিতে দেখল কতকগুলি মায়ামূর্তি ক্রমশ এগিয়ে আসছে। তাদের কারো গায়ে র্যা শ বেরিয়েছে, কেউ-বা কাশছে। কেউ কিন্তু স্বেচ্ছাকর্মীদের স্পর্শ করছে না। অন্য কতকগুলো মায়ামূর্তি আবার সুস্থ। এবার আরেক দল স্বেচ্ছাকর্মীকে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন দেওয়া হল। অর্থাৎ তারা সত্যিকারের রোগজীবাণু শরীরে ধারণ করল। তারা কিন্তু ওই মায়ামূর্তি দেখল না।
পরীক্ষার ফল থেকে দেখা গেল, কী হতে পারে তা বুঝে নেওয়া আর হলে তার উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা বেছে নেওয়ার ক্ষমতা মস্তিষ্কের আছে। গত ২৮ জুলাই নেচার নিউরোসায়েন্স পত্রিকায় এ গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি হয়েচ্ছে সুইটজারল্যান্ডের লোসান-এর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।
বিজ্ঞানীরা দেখলেন, সংক্রমণের লক্ষণযুক্ত মায়ামূর্তিগুলোকে এগিয়ে আসতে দেখে স্বেচ্ছাকর্মীদের মস্তিষ্কের কয়েকটি অঞ্চল সক্রিয় হয়ে উঠল – সেইসব অঞ্চল যেগুলি মানুষের ব্যক্তিগত পরিসরের সঙ্গে যুক্ত, যেগুলো শরীরকে একেবারে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকে। তারপর মস্তিষ্কের ‘বিচার বিবেচনা নেটওয়ার্ক’-এর মধ্যে ব্যাপক সক্রিয়তা জাগল। এই নেটওয়ার্কটির কাজ হল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যথা বিপদ-আপদের সম্ভাবনা দেখা দিলে তা শনাক্ত করা এবং সাড়া দেওয়া। মস্তিষ্কের এই সক্রিয়তার ধাক্কায় রোগ-প্রতিরোধক লিম্ফ জাতীয় কোষের সংখ্যা দমকে দমকে ঘন ঘন বাড়তে থাকল। এরাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ের সৈনিক। যেসব স্বেচ্ছাকর্মী অসুস্থ মায়ামূর্তি দেখেছিল তাদের দেহে এই প্রতিরোধী কোষের অনেক ঘনঘন বাড়ল। আরও দেখা গেল, যেসব স্বেচ্ছাকর্মী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিয়েছিল, তাদের দেহেও ঠিক একই রকম প্রতিক্রিয়া হয়।
শরীরের দুটি জটিল সিস্টেমের মধ্যে এই অসাধারণ সমন্বিত ক্রিয়া বিজ্ঞানীদলকে মুগ্ধ করেছে। এ-দুটি সিস্টেম পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে চলে এইজন্য যে দুটি সিস্টেমই প্রতিবেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তলে ক্রিয়া করে রোগজীবাণু প্রমুখ সম্ভাব্য বিপদআপদের বিরুদ্ধে সুরক্ষা গড়ে তোলে। গবেষকরা মনে করছেন, এই আবিষ্কারের ফলে ভ্যাকসিনের উন্নতি ঘটানো সম্ভব হবে। ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি হয়তো সেইসব প্রতিরোধী কোষের সক্রিয়তা বাড়িয়ে তুলবে যেগুলি ভ্যাকসিনের নিশানা। আর সেটা হলে ভ্যাকসিনের প্রতি সাড়া আর ভাকসিনের দক্ষতা বাড়বে।
সূত্র: Nature 29 July doi: https://doi.org/10.1038/d41586-025-02363-7