মানব ডিএনএ-তে লুকিয়ে শীতঘুমের শক্তি

মানব ডিএনএ-তে লুকিয়ে শীতঘুমের শক্তি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ আগষ্ট, ২০২৫

শীতঘুম এক জৈবিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় কিছু প্রাণী শীতকালে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমিয়ে অচলাবস্থায় কাটায়। হেজহগ, বাদুড়, মাটির কাঠবেড়ালি, লেমুর প্রভৃতি প্রাণী এ অবস্থায় বহু মাস খাদ্য ও জল ছাড়াই বেঁচে থাকে। এ সময় তাদের শরীরের তাপমাত্রা প্রায় হিমাঙ্কে নেমে আসে, বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, মস্তিষ্ক কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকে।এইভাবে তারা শরীরের শক্তি সংরক্ষণ করে।
আশ্চর্যের বিষয়, শীতঘুম ভেঙে তারা সুস্থভাবে ফিরে আসে। এমনকি টাইপ-২ ডায়াবেটিস, আলঝেইমার বা স্ট্রোক প্রভৃতি রোগের উপসর্গ থেকেও নিজেদের মুক্ত করতে সক্ষম হয়। উটা স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে, এদের এই অসাধারণ ক্ষমতার উৎস হতে পারে এমন জিন যা আমাদের মানব ডিএনএ-তেও আছে। এই তথ্য ভবিষ্যতে স্নায়ু অবক্ষয় জনিত রোগ ও ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় নতুন দিক খুলে দিতে পারে।
গবেষকরা এধরণের প্রাণীদের ফ্যাটের পরিমাণ ও মোটা হওয়া সংক্রান্ত একটি জিন সমাহারের ভূমিকা শনাক্ত করেছেন, যা মানুষের স্থূলতার জন্যও দায়ী। এই প্রাণীরা শীতঘুমে যাওয়ার আগে ওজন বাড়ায় এবং পরে সেই জমানো চর্বি ব্যবহার করে ধীরে ধীরে বেঁচে থাকার শক্তি সংগ্রহ করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ওই সমাহারে থাকা কিছু নির্দিষ্ট জিন এবং কিছু পারিপার্শ্বিক জিন ডিএনএর সেই বিশেষ অংশে প্রভাব ফেলে যেগুলো মূলত জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। ইঁদুরের ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখা গেছে ডি এন এর এই নির্দিষ্ট অংশে থাকা জিনের পরিবর্তন ঘটালে তাদের ওজন ও বিপাকীয় হার বদলে যায়।
আশ্চর্যের বিষয়, ওই সমাহারটি মানব জিনোমে এমন একটি নির্দিষ্ট জিন অঞ্চলে অবস্থিত যারা নিজেরা জিন নয়, বরং নিয়ন্ত্রক। এই অংশটি ফ্যাট ও স্থূলতার একাধিক জিনকে প্রভাবিত করে শরীরের ওজন, চর্বি জমা এবং খাদ্য গ্রহণকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। একটি ছোট অংশ বাদ দিলেই শত শত জিনের কার্যকলাপ পাল্টে যায়। এটি শীত-ঘুমন্ত প্রাণীদের বিপাকীয় নমনীয়তার প্রমাণ।
বিজ্ঞানীরা আরও শনাক্ত করেন, বহু স্তন্যপায়ীর মধ্যে কোন কোন ডিএনএ অঞ্চল অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু শীত ঘুমের প্রাণীদের মধ্যে হঠাৎ করে পরিবর্তিত হয়েছে। এটি নির্দেশ করে, ওই অংশগুলিই শীতঘুমের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এইসব পরিবর্তন অনেক সময় কোনো নতুন ক্ষমতা দেয় না, কিন্তু পূর্বের সীমাবদ্ধতা সরিয়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানব ডিএনএ-তেও হয়তো এই ক্ষমতা লুকিয়ে থাকতে পারে। আমরা যদি শীত ঘুমের প্রাণীদের মতো জিন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে বার্ধক্যজনিত রোগ, ডায়াবেটিস, স্নায়ুক্ষয় প্রভৃতি সমস্যার কার্যকর সমাধান পাওয়া সম্ভব হতে পারে।

সূত্র: Elliott Ferris et al, Genomic convergence in hibernating mammals elucidates the genetics of metabolic regulation in the hypothalamus, Science (31.7.2025).
DOI: 10.1126/science.adp4025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − four =