সস-এর শক্তি

সস-এর শক্তি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩১ আগষ্ট, ২০২৫

স্যালাডের জন্য ব্যবহৃত মুখরোচক সস বা মশলা(স্যালাডের ড্রেসিং) , কেচাপ, আইসক্রিম, গ্লুটেন-ফ্রি রুটি বা এমনকি টুথপেস্ট—প্রতিদিনের এইসব পরিচিত খাবারে কিংবা জিনিসে থাকে এক বিশেষ ঘনকারক উপাদান। খাবারের ঘনত্ব বাড়ানো,স্থায়িত্ব বজায় রাখা এবং মিশ্রণের মাত্রা সঠিক রাখার জন্য প্রাকৃতিক সেলুলোজকে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তন করে বানানো হয় এ ধরনের উপাদান । এতদিন বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন এগুলো হজম হয় না, অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ হিসেবে সরাসরি শরীর দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (ইউ বি সি )-এর সাম্প্রতিক আবিষ্কার জানাল ধারণাটা পুরোপুরি ভুল।

গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের অন্ত্রে থাকা নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়া এই ঘনকারক পদার্থগুলোকে ভেঙে শর্করাতে রূপান্তর করতে পারে, যার ফলে শক্তি উৎপাদন হয়। কৌশলটা হলো—যখন আমরা ফল, শাকসবজি বা শস্যজাত খাদ্য খাই, সেখানে থাকা প্রাকৃতিক পলিস্যাকারাইডস (বহুশর্করা) ব্যাকটেরিয়াকে বিশেষ উৎসেচক তৈরি করতে সক্রিয় করে। সেই একই উৎসেচক আবার কৃত্রিম সেলুলোজ থেকে তৈরি এইসব উপাদান ভাঙতেও সক্ষম। গবেষণাপত্রর প্রধান লেখক ড. দীপেশ পানওয়ার বলেন, “আমরা প্রথমবার দেখলাম, এই উপাদানগুলো নিছক নিষ্ক্রিয় নয়; বরং ব্যাকটেরিয়ার কাছে এগুলো একধরনের ‘গোপন খাদ্য’।”

এখন প্রশ্ন হল তাহলে দীর্ঘদিন ধরে আমরা এতকিছু কেন জানতে পারলাম না? আসলে মূল সমস্যা ছিল পরীক্ষার ধরনে। ল্যাবরেটরিতে সাধারণত এই সেলুলোজজাত উপাদানগুলিকে আলাদাভাবে পরীক্ষা করা হয়। একা থাকলে এগুলো কোনো উৎসেচককে সক্রিয় করতে পারে না, ফলে গবেষকরা মনে করেছিলেন এগুলো একেবারেই হজম হয় না। অথচ বাস্তবে আমাদের খাবারে এগুলো ফল-শাকের আঁশের সাথে মিশে থাকে । আর এভাবে খাদ্যের সাথে একত্রে থাকলেই এদের ভাঙা সম্ভব হয়।

বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন , এই ফলাফল কোনোভাবেই সেলুলোজজাত ঘনকারকের খাদ্যনিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না। বহু বছর ধরে এগুলো বিশ্বজুড়ে নিরাপদে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এখন যেহেতু জানা গেছে এগুলো আসলে অন্ত্রে ভেঙে যায়, তাই ভবিষ্যতে এর পুষ্টিগত ও মানবস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হবে।

ড. হ্যারি ব্রুমার বলেছেন যে, প্রচলিত ধারণার বিপরীতে গিয়ে এই আবিষ্কার আমাদের অবাক করেছে। এখন দেখতে হবে আরও কত ধরণের ব্যাকটেরিয়া এই ক্ষমতা রাখে এবং তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী।

এখন থেকে যখন স্যালাডে মুখরোচক সস দেওয়া হবে বা বার্গারে কেচাপ মাখানো হবে , মনে রাখতে হবে, এতে শুধু আমাদের স্বাদই পূর্ণ হচ্ছে না, বরং আমাদের অন্ত্রের অণুজীবদের জন্য এক নতুন শক্তির উৎস সরবরাহ করা হচ্ছে।

 

সূত্র: “Artificial cellulose derivatives are metabolized by select human gut Bacteroidota upon priming with common plant β-glucans” by Deepesh Panwar, William A. Stewart, et. Al; (21.7.2025), Journal of Bacteriology.

DOI: 10.1128/jb.00198-25

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 5 =