
আমাদের শরীরে প্রতিদিন নীরবে ক্ষরিত হরমোনগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো কর্টিসল। এটিকে অনেক সময় “স্ট্রেস হরমোন” বলা হয়, কারণ এ আমাদের মানসিক চাপ, রক্তচাপ, বিপাকক্রিয়া থেকে শুরু করে ঘুম আসা ঘুম ভাঙা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু কর্টিসলের মাত্রা সামান্যও বেড়ে বা কমে গেলে শরীর ও মনের নানা জটিলতা দেখা দেয়, যথা হৃদরোগ, স্থূলতা, উদ্বেগ বা বিষণ্নতা । এতদিন এই হরমোন মাপতে মানুষকে নির্ভর করতে হতো ব্যয়বহুল ল্যাবরেটরি ও চিকিৎসকের ওপর। এবার সেই রীতি ভেঙে দিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (সান্তা ক্রুজ) একদল বিজ্ঞানীর এক মস্ত আবিষ্কার। এখন ঘরে বসেই কর্টিসলের মাত্রা মাপা যাবে।
সহকারী অধ্যাপক অ্যান্ডি ইয়ে উদ্ভাবন করেছেন এক অভিনব প্রোটিন-ভিত্তিক বায়োসেন্সর, যা কর্টিসল শনাক্ত করে সরাসরি আলো তৈরি করে। আর এই আলোক সংকেত ধরতে আলাদা কোনো জটিল যন্ত্রের দরকার হয় না, একটি সাধারণ স্মার্টফোন ক্যামেরাই যথেষ্ট। মানে, হাতের মুঠোয় থাকা ফোন দিয়েই এখন এই হরমোন মাপা যাবে।
প্রকৃতির কোনো প্রোটিন ধার করে নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সম্পূর্ণ নতুন প্রোটিন তৈরি করেছেন ইয়ে। কর্টিসল অণু উপস্থিত থাকলে দুটি কৃত্রিম প্রোটিন কাছাকাছি এসে মিলিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে আলোক ঝলক তৈরি করে। আলো যত উজ্জ্বল, শরীরে কর্টিসল তত বেশি। এভাবে সহজেই সংখ্যাগত পরিমাণ বের করা যায়, যা আগের পরীক্ষাগুলোতে প্রায় অসম্ভব ছিল।
পরীক্ষাটি মূলত “মিক্স অ্যান্ড রিড” ধাঁচের, অনেকটা কোভিড-১৯-এর র্যাপিড টেস্টের মতো। রক্ত বা মূত্রের এক ফোঁটা নমুনা সেন্সরযুক্ত দ্রবণে মিশিয়ে স্মার্টফোন দিয়ে ছবি তুললেই অ্যাপটি আলোর রঙ ও উজ্জ্বলতা বিশ্লেষণ করে সরাসরি জানিয়ে দেবে কর্টিসলের সঠিক মাত্রা। ফলে হাসপাতালের ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই, পরীক্ষার ফল মিলবে সাথেসাথেই।
প্রচলিত কর্টিসল পরীক্ষায় একটি বড় সমস্যা হলো, স্বাভাবিক সীমার বাইরে গেলে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। নতুন সেন্সর সেই সীমাবদ্ধতা দূর করেছে। এটি খুব কম, স্বাভাবিক ও অতিরিক্ত সব মাত্রার কর্টিসলই নির্ভুলভাবে মাপতে সক্ষম। গবেষকদের কথায়, এই সেন্সর বর্তমান হাসপাতালের পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি সুবেদী এবং বহুমাত্রিক।
গবেষকদের আশা, ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তি শুধু ঘরে বসে স্বাস্থ্যপরীক্ষাই নয়, ওষুধ তৈরি, হরমোন ঘটিত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পরিকল্পনাতেও পরিবর্তন ঘটাতে পারে। কেবল একটি স্মার্টফোনের সাহায্যে মানুষের শরীরের চাপ নিয়ন্ত্রণের তথ্য এত সহজে জানা স্বাস্থ্যপরিসেবাকে আরও সহজ ও মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে এসেছে।
সূত্র: “De Novo Design of High-Performance Cortisol Luminescent Biosensors” by Julie Yi-Hsuan Chen, Xue Peng, Chenggang Xi, Gyu Rie Lee, David Baker and Andy Hsien-Wei Yeh, 28 July 2025, Journal of the American Chemical Society.
DOI: 10.1021/jacs.5c05004