হোমো সেপিয়েন্স আর নিয়ান্ডারথালের আন্তঃপ্রজনন

হোমো সেপিয়েন্স আর নিয়ান্ডারথালের আন্তঃপ্রজনন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

১৯৩০-এর দশকে ইসরায়েলের মাউন্ট কার্মেলের স্কাল গুহায় খননকাজ চলাকালীন একটি শিশুর কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছিল। তখন সেটিকে কেবল প্রাচীন হোমো স্যাপিয়েন্স বা আধুনিক মানুষের নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। আধুনিক প্রযুক্তিতে পুনঃবিশ্লেষণের পর জানা গেল, প্রায় ১,৪০,০০০ বছর আগে জীবিত এই শিশুর কঙ্কালে মিশে আছে হোমো স্যাপিয়েন্স (আধুনিক মানুষ) এবং নিয়ান্ডারথালের বৈশিষ্ট্য। এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে প্রাচীন মানব জীবাশ্ম, যেখানে স্পষ্টভাবে দুই প্রজাতিরই বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে। গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন টেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইসরায়েল হারশকোভিটজ এবং ফরাসি সি এন আর এস-এর অ্যান ড্যামব্রিকুর্ট-মালাসে।

গবেষণায় উঠে এসেছে এক চমকপ্রদ সংকরায়নের ইঙ্গিত। শিশুর মাথার খুলি আধুনিক মানুষের মতো গোলাকার, কিন্তু নীচের চোয়ালে নেই কোনো প্রকৃত চিবুক যা, আমাদের প্রজাতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সুতরাং, বৈশিষ্ট্যটি আধুনিক মানুষের সাথে না মিলে , মিলল নিয়ান্ডারথালের সাথে। আবার, দাঁতের বিন্যাস এবং অন্তঃকর্ণের গঠনও নিয়ান্ডারথালের দিকে ইঙ্গিত করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্তঃকর্ণের এই গঠন জীবাশ্মে দীর্ঘদিন টিকে থাকে, তাই এটি জনসমষ্টিগত ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য চিহ্ন।

স্কাল ও কফজেহ গুহা বহুদিন ধরেই বিশ্বের প্রাচীনতম আনুষ্ঠানিক সমাধির জন্য পরিচিত। এখন যদি দেখা যায় এই শিশুটি খাঁটি মানুষ ছিল না, সংকর, তবেই প্রমাণিত হবে এই প্রাচীন সমাধিগুলো আসলে মিশ্র জনসমষ্টির সাংস্কৃতিক নিদর্শন। অর্থাৎ মানুষ ও নিয়ান্ডারথাল শুধু একে অপরকে চিনতই না, তারা দীর্ঘ সময় ধরে পাশাপাশি বাস করত, একে অপরের সাথে সহবাসও করত । তবে সব বিজ্ঞানী এতে একমত নন। লন্ডনের বিশেষজ্ঞ ক্রিস স্ট্রিঙ্গার মনে করেন, হাড়ের অধিকাংশ বৈশিষ্ট্যই মানুষের সাথে মিলে যায়। অনেক গবেষকের মতে, মানুষের শরীরে নিয়ান্ডারথালের ডিএনএ প্রবাহ মূলত ঘটেছিল প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে, যা শিশুর জীবদ্দশার অনেক পরের ঘটনা। তাই এই শিশুকে সরাসরি “সংকর ” বলা এখনই ঠিক নয়।

সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উত্তর আসতে পারে যদি কঙ্কাল থেকে প্রাচীন ডিএনএ উদ্ধার করা যায়। যদিও উষ্ণ অঞ্চলের মাটিতে হাড়ের জেনেটিক উপাদান সাধারণত নষ্ট হয়ে যায়, তবুও কর্ণাস্থির শক্ত হাড়ে অনেক সময় ভালো ডিএনএ সংরক্ষিত থাকে। যদি শিশুটির খুলি থেকেও এমন ডিএনএ উদ্ধার করা যায়, তবে মানুষের সাথে নিয়ান্ডারথালের সহবাসের সময়কাল ও প্রকৃতি আরও পরিষ্কার হবে।

 

এই গবেষণা আমাদের একটাই বার্তা দেয় যে , মানুষ ও নিয়ান্ডারথাল কেবল অল্প সময়ের জন্য নয়, হাজার হাজার বছর ধরে একে অপরের সঙ্গী ছিল। সেই সহবাসের প্রমাণ আজও আমরা বয়ে বেড়াই শরীরে আমাদের ডিএনএর ভেতরে।

 

সূত্র: A new analysis of the neurocranium and mandible of the Skhūl I child: Taxonomic conclusions and cultural implications by Bastien Bouvier, et.al ; L’Anthropologie (Volume 129, Issue 3 ; July – August 2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × one =