
সম্প্রতি হাবল মহাবীক্ষণযন্ত্রে, মেসিয়র ৯৬ নামক একটি আকর্ষক সর্পিল ছায়াপথ দেখা গেছে। তার বাইরের অংশে নবীন তারাগুচ্ছের আলোকচক্র সৃষ্টি হয়েছে। মেসিয়র ৯৬ “সিংহ ” (Leo) রাশিচক্রে অবস্থিত। এটি প্রায় ৩ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থিত। এর বাহুগুলি সাধারণ সর্পিল ছায়াপথের মতো সমভাবে বিস্তৃত নয়। একপাশের বাহু কিছুটা বিকৃত ও ছড়ানো। গ্যালাক্সির কেন্দ্রে কিছুটা ত্রুটিপূর্ণ স্থানান্তর দেখা যাচ্ছে। বাইরের অংশে গ্যাস ও ধুলো ছড়িয়ে রয়েছে । গবেষকরা মনে করছেন যে এই বিকৃত আকৃতি ‘গ্র্যাভিটেশনাল টাগ-অফ-ওয়ার’ বা অভিকর্ষীয় টানাপোড়েনের ফল। কাছাকাছি অবস্থানরত গ্যালাক্সিগুলির মধ্যকার মহাকর্ষ বল মেসিয়র ৯৬-কে আকৃষ্ট করছে, ফলে ধরা ছোঁয়ার মধ্যে থাকা বাহু ও গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে।
হাবল টেলিস্কোপ অতিবেগুনি ও দৃশ্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ছবি নিয়েছে, যা নবীন তারাগুলিকেও স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। বাইরের অংশে গ্যাসের গাঢ় মেঘগুলোর মধ্যে বিভিন্ন তারাগুচ্ছ জন্ম নিচ্ছে। ধুলো ও গ্যাস এখনও অনেক তারার চারপাশে রয়েছে ।অর্থাৎ এই তারাগুলি সবচেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সৃষ্টি হয়েছে এবং এখনও তাদের জন্মভূমির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
এই থেকে মিলেছে কয়েক ধরণের নতুন তথ্য। যথা:
ক. তারার গঠনের প্রক্রিয়া ধুলো ও গ্যাসের ঘন মেঘগুলি থেকে কিভাবে তারাগুলি জন্ম নেয়; কখন ধূলো কেন্দ্রটি তারাকে আবৃত রাখে, কখন তা আলোকে ছড়িয়ে দেয়; তার আলোর প্রকৃতি কেমন হবে।
খ. গ্যালাক্সি-পরিবেশের প্রভাব অর্থাৎ পার্শ্ববর্তী ছায়াপথের মহাকর্ষীয় প্রভাব কিভাবে একটি গ্যালাক্সির বাহু বিকৃতি ঘটায়, গ্যাস ছড়িয়ে দেয় এবং তারার উৎপাদনকে মদত দেয় কিংবা বাধাগ্রস্ত করে।
গ. অতিবেগুনি ও দৃশ্য তথ্য মিলিয়ে দেখা গেছে, নবীন তারাগুলি ও গ্যাসের মেঘ কতটা পরিষ্কার বা নীরব পরিবেশে রয়েছে তা নির্ধারণে এগুলো অপরিহার্য। গবেষকরা আশা করছেন পর্যবেক্ষণ থেকে এ সম্পর্কে আরও গভীর ও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। গ্যাস ও ধুলো ছড়িয়ে পড়ার গতিবিধির জ্যামিতি (kinematics) সম্পর্কে তথ্য জানাবে গ্যাস কোথা থেকে আসছে ও কোথায় যাচ্ছে। তারার বয়স ও ভর নির্ধারণ করা যাবে। তা থেকে জানা যাবে এই নতুন তারাগুলোর বয়স কতটা কম, গ্যালাক্সির বিকৃতি কতক্ষণ ধরে প্রকাশ্যে থাকবে, এবং তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক আকৃতির দিকে ফিরে যেতে পারে কি না। মেসিয়র ৯৬ গ্যালাক্সিতে হাবলের নতুন ছবি পুরনো ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে বলছে, গ্যালাক্সি স্থির নয়, পরিবর্তনশীল ও জীবন্ত। মহাকর্ষের টানাপোড়েনের খেলায় তার আকৃতি বিকৃত হয়, তবে তার গায়ে জেগে ওঠে নতুন তারাগুলোর দীপ্তি । এ এমন এক দৃশ্য যা দেখায় যে মহাবিশ্ব ক্রমাগত গতিশীল ও সৃষ্টিময়।
সূত্র : Euclid: A complete Einstein ring in NGC 6505” by C. M. O’Riordan, L. J. Oldham, A. Nersesian, et.al ; 10 February 2025, Astronomy & Astrophysics.