কোলাহল ছাপিয়ে শোনার ক্ষমতা 

কোলাহল ছাপিয়ে শোনার ক্ষমতা 

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ অক্টোবর, ২০২৫

আমরা সাধারণত মনে করি, যার শ্রবণশক্তি ভালো তার হয়তো ভিড় বা কোলাহলের মাঝে কথোপকথন বুঝতে কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত নতুন এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। শুধু কান নয়, মস্তিষ্কের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতাও নির্ধারণ করে দেয়, একজন ভিড়ের মধ্যে কতটা দক্ষভাবে শুনতে বা বুঝতে পারবে।

বিজ্ঞানীরা মোট ৪৯ জনের তিনটি আলাদা গ্রুপ নিয়ে এই গবেষণা চালান।এদের বয়স ছিল ১৩ থেকে ৪৭ বছরের মধ্যে। যার মধ্যে ১২ জন অটিজমযুক্ত , ১০ জন মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মায়ের মদ্যপান জনিত জন্মগত সিনড্রোমে আক্রান্ত এবং ২৭ জন স্নায়বিকভাবে স্বাভাবিক (নিউরোটিপিকাল) মানুষ। সবার শ্রবণশক্তি স্বাভাবিক হলেও ভিড়ের মধ্যে শুনে বোঝার ক্ষমতায় তাদের বিস্তর পার্থক্য ধরা পড়ে।

পরীক্ষার ধরনটি ছিল বেশ কঠিন। অংশগ্রহণকারীদের হেডফোনে একজন প্রধান বক্তার কণ্ঠ শোনানো হয়, এবং একই সময়ে পিছনে দুইজনের কন্ঠ বাজতে থাকে। মূল বক্তার বক্তব্যে একটি সংকেত, রং এবং সংখ্যা উল্লেখ করা হত। অংশগ্রহণকারীর কাজ ছিল সঠিক রঙ ও সংখ্যার বাক্স বেছে নেওয়া। ধীরে ধীরে পিছনের কন্ঠর জোর বাড়ানো হলে পরীক্ষাটি কঠিন হয়ে ওঠে।

এরপর তাদের সংক্ষিপ্ত মানসিক সক্ষমতা পরীক্ষা নেওয়া হয়, যেমন মৌখিক দক্ষতা, অ-মৌখিক দক্ষতা ও উপলব্ধিমূলক যুক্তি যাচাই। আশ্চর্যের ব্যাপার, ভিড়ের মধ্যে শোনার ক্ষমতা আর বুদ্ধিমত্তার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেল। যাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা বেশি, তারা কোলাহলপূর্ণ পরিবেশেও তুলনামূলকভাবে সহজে বক্তব্য আলাদা করে বুঝতে পেরেছে।

গবেষক বনি লাও ব্যাখ্যা করেন, ভিড়ের মধ্যে সফলভাবে শোনার জন্য মস্তিষ্ককে একসাথে অনেক কাজ করতে হয়, যেমন -বিভিন্ন কণ্ঠস্বর আলাদা করা, মনোযোগ ধরে রাখা, অন্য শব্দ এড়ানো, প্রতিটি শব্দ ও ধ্বনি শনাক্ত করা, অর্থ বোঝা, এমনকি সামাজিক সংকেতে হাসি বা মাথা নেড়ে সাড়া দেওয়া। সব মিলিয়ে এটি একটি ভারী বোধবুদ্ধিগত চাপ তৈরি করে। তাই যে ব্যক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে শক্তিশালী, সে এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেকটাই এগিয়ে থাকে।

এই গবেষণার ফলাফল আমাদের দীর্ঘদিনের একটি বড় ভুল ধারণা ভেঙে দিল। অর্থাৎ , শোনার অসুবিধা মানেই শ্রবণশক্তির ঘাটতি নয়। অনেকের কান একেবারে সুস্থ থাকলেও ভিড়ের মধ্যে শুনতে কষ্ট হয়, কারণ তাদের মস্তিষ্ক সেই শব্দ প্রক্রিয়াজাত করার মতো পর্যাপ্ত দক্ষ নয়।

 

এই গবেষণাটি অবশ্য ছিল ছোট আকারের। ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে পরীক্ষা প্রয়োজন। তবুও এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে, যেসব শিশু শ্রেণিকক্ষের চিৎকার চেঁচামেচির মধ্যে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না, তাদের জন্য সহজ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যেমন, সামনে বসানো বা বিশেষ শ্রবণ-সহায়ক প্রযুক্তি ব্যবহার করা।

 

সূত্র: “The relationship between intellectual ability and auditory multitalker speech perception in neurodivergent individuals” 24 September 2025, PLOS One.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − 2 =