মঙ্গোলিয়ার তৃণভূমির অবক্ষয়  

মঙ্গোলিয়ার তৃণভূমির অবক্ষয়  

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ অক্টোবর, ২০২৫

মঙ্গোলিয়ার বিশাল তৃণভূমি নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত ৪১ বছরের একটি গবেষণা প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিয়েছে। এতদিন পর্যন্ত ধারণা ছিল, অতিচারণই তৃণভূমি অবক্ষয়ের প্রধান কারণ । কিন্তু কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস ব্যারেটের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, দীর্ঘমেয়াদে তৃণভূমির অবক্ষয়ের মূল চালিকাশক্তি আসলে জলবায়ু পরিবর্তন, আর পশুর সংখ্যা কেবল স্বল্পমেয়াদী প্রভাব ফেলে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এক ঋতুতে যদি পশুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়, তবুও তৃণভূমির সবুজত্ব (NDVI সূচক) কয়েক শতাংশের বেশি কমে না। বিপরীতে, বছর বছর আবহাওয়ার পরিবর্তন ও দীর্ঘমেয়াদি উষ্ণতা বৃদ্ধি তৃণভূমির উৎপাদনশীলতাকে ২০ গুণ বেশি প্রভাবিত করে। শীতপ্রবণ ও উর্বর অঞ্চলে সাময়িকভাবে পশুর চাপ স্পষ্ট হলেও, শুষ্ক ও উষ্ণ অঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধিই প্রকৃত বিপদ।

মঙ্গোলিয়ার জলবায়ু ইতিমধ্যেই বদলে গেছে। সরকারি তথ্য বলছে, ১৯৪০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে দেশটির গড় তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ২.০৭° সেলসিয়াস। বৃষ্টিপাতের ধরণও বদলে অনেক এলাকায় শুষ্কতা বেড়েছে। এর ফলে তৃণভূমির প্রাকৃতিক উৎপাদন ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমছে।

এ গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি সাধারণ সম্পর্কের বদলে কার্যকারণ বিশ্লেষণ করেছে। উপগ্রহ ভিত্তিক উপাত্ত ও সরকারিভাবে নথিভুক্ত পশুর সংখ্যা মিলিয়ে তাঁরা দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা বের করেন। বিশেষ করে ভয়াবহ শীতকালীন দুর্যোগ জনিত তীব্র ঠান্ডা, প্রবল বাতাস ও তুষারপাত পশুপালনে যে বিপর্যয় আনে তাকে ভিত্তি করে তাঁরা বিশ্লেষণ চালান। ফলাফল থেকে স্পষ্ট দেখা যায় তাপমাত্রা বৃদ্ধিই মূল চালক।

এই গবেষণা নীতিপ্রণেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। কেবল পশুর সংখ্যা কমানো বা কর আরোপ করে দীর্ঘমেয়াদে তৃণভূমি রক্ষা সম্ভব নয়। অবশ্যই স্থানীয় পর্যায়ে কিছু ব্যবস্থা যেমন—পশুদের চারণভূমি পাল্টানো , উঁচু এলাকার গ্রীষ্মকালীন আশ্রয় – অস্থায়ী স্বস্তি দিতে পারে। কিন্তু আসল সমাধান লুকিয়ে আছে বৈশ্বিক জলবায়ু নীতিতে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন না কমালে তৃণভূমির উৎপাদন ক্ষমতা বাঁচানো যাবে না।

ভবিষ্যতে উন্নত রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি, মাটির আর্দ্রতা মাপা ও তাপমাত্রার সীমা নির্ধারণ এসব নিয়ে আরও গবেষণা হবে। এগুলো শুধু তৃণভূমির স্বাস্থ্য বোঝার জন্য নয়, পশুপালকদের জীবনযাত্রা ও আয়ের ঝুঁকি মাপার ক্ষেত্রেও কাজে আসবে। উদাহরণস্বরূপ, ঘাস উৎপাদনের সাথে দুধ, মাংস ও পশুর ওজন সরাসরি যুক্ত। তাই উৎপাদনের পূর্বাভাস দিলে আগেভাগে সংকট মোকাবিলা সহজ হবে।

 

মঙ্গোলিয়ার মতো দেশ, যারা বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সামান্য অবদান রাখে, তাদের তৃণভূমিই আজ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় শিকার। পশুপালকেরা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে কোনো একটা ঋতুর চাপ হয়তো সামলাতে পারেন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে প্রকৃতির উষ্ণতা যে সীমা তৈরি করছে তা আর অতিক্রম করা যায় না। তাই ভবিষ্যতের তৃণভূমি বাঁচাতে স্থানীয় প্রচেষ্টার পাশাপাশি অবিলম্বে বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়া খুব জরুরি।

 

সূত্র: Climate rather than overgrazing explains most range land primary productivity change in Mongolia by Chiristopher B.Barrett,10.09.2025.

DOI:10.1126/science.adn0005.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − ten =