সর্বাধিক ক্রোমোসোমধারী প্রজাপতি

সর্বাধিক ক্রোমোসোমধারী প্রজাপতি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ অক্টোবর, ২০২৫

মরক্কোর পার্বত্য অ্যাটলাস ব্লু প্রজাপতি বর্তমানে পৃথিবীর সর্বাধিক ক্রোমোসোম ধারণকারী বহুকোষী প্রাণীর স্বীকৃতি পেয়েছে। এর শরীরে রয়েছে ২২৯ জোড়া ক্রোমোজোম। তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের তুলনায় এটা প্রায় দশ গুণ বেশি। যেমন, যুক্তরাজ্যের সাধারণ নীল প্রজাপতির দেহে মাত্র ২৪ জোড়া ক্রোমোসোম আছে। এই চমকপ্রদ আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে ব্রিটেনের ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউট এবং আইবিই, সিএসআইসি-ইউপিএফ এর যৌথ গবেষণা। গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই বিপুল সংখ্যক ক্রোমোসোম কিন্তু নকল করা নয়, বরং বিভাজনের ফল। অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় বড় ক্রোমোসোমগুলি ছোট ছোট অংশে ভাগ হয়ে গেছে। এই প্রথম বিজ্ঞানীরা মরক্কোর পার্বত্য অ্যাটলাস ব্লু প্রজাপতির পূর্ণাঙ্গ রেফারেন্স জিনোম সিকোয়েন্স করতে সক্ষম হলেন। এই রেফারেন্স তথ্য অন্যান্য প্রজাপতি ও পতঙ্গের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণের সুযোগ দেবে। বিবর্তন, প্রজাতি বিভেদ, ও তাদের অভিযোজন বোঝার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই প্রজাপতির জিনোমে এমন সব অংশ রয়েছে যেখানে ডি এন এ- এর ঘনত্ব কম। এই ধরনের এলাকাগুলিতে ক্রোমোসোম বিভাজন সহজ হয়। ফলে গঠিত হয় অনেক ছোট ছোট ক্রোমোসোম। গবেষকরা মনে করছেন, প্রায় ৩০ লক্ষ বছর আগে এ প্রজাতির ক্রোমোসোম সংখ্যা ছিল ২৪ জোড়া। যা সময়ের সঙ্গে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৯ জোড়ায়। বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে এ এক দ্রুত পরিবর্তন। সাধারণত এত বড় পরিবর্তন নেতিবাচক বলে ধরা হয়। কিন্তু অ্যাটলাস ব্লু প্রজাপতি লাখো বছর ধরে সফলভাবে টিকে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ক্রোমোসোম বিভাজনের ফলে জিনের বৈচিত্র্য বেড়েছে। সেটা প্রজাতিকে পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত অভিযোজিত হতে সাহায্য করেছে। তবে এই জটিল জিনোম কাঠামো ভবিষ্যতে বিলুপ্তির ঝুঁকিও বাড়াতে পারে, কারণ অতিরিক্ত ক্রোমোসোমের পরিচালনা কঠিন হতে পারে। এ কারণেই গবেষকরা আরও তুলনামূলক বিশ্লেষণ করছেন, কোন জিনগুলো সংরক্ষিত হয়েছে, আর কোনগুলো হারিয়ে গেছে — তা বোঝার জন্য। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মানুষের ক্যান্সার কোষেও অনুরূপ ক্রোমোসোম পুনর্বিন্যাস দেখা যায়। গবেষকরা মনে করছেন, এই প্রজাপতির জিনোম বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যেতে পারে কীভাবে এই বিভাজন ঘটে এবং কিভাবে তা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই গবেষণা ভবিষ্যতে মানব ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটের ড. শার্লট রাইট বলেন, “আমরা যখন প্রজাপতির বিবর্তন বুঝতে চাইলাম, তখন সবচেয়ে রহস্যময় ও চরম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রজাতিটি নিয়েই কাজ শুরু করি।” তার সহগবেষক ড. রজার ভিলা জানান, “অন্যান্য প্রজাপতিতেও কিছু ক্রোমোসোম বিভাজন দেখা যায়, তবে এই মাত্রায় নয়। এটা ইঙ্গিত দেয় যে, এই প্রক্রিয়ার পিছনে কোনো গভীর বিবর্তনগত কারণ আছে।”অ্যাটলাস ব্লু প্রজাপতি মূলত মরক্কো ও উত্তর-পূর্ব আলজেরিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে পাওয়া যায়। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, বনভূমি ধ্বংস (বিশেষত সিডার বন) ও অতিরিক্ত পশুচারণের ফলে এদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। এই প্রজাতির জিনগত বিবর্তন ও অভিযোজন বোঝা কেবল জৈববিজ্ঞান বা বিবর্তনের জন্যই নয়, সংরক্ষণনীতি ও কৃষির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। গবেষকরা আশাবাদী, এ ধরনের জিনোম বিশ্লেষণ ভবিষ্যতে, পরিবেশ সহনশীল প্রজাতি ও ফসল উদ্ভাবনেও সহায়ক হবে।

 

সূত্র: “Constraints on chromosome evolution revealed by the 229 chromosome pairs of the Atlas blue butterfly” by Charlotte J. Wright, Dominic Absolon, Martin Gascoigne-Pees, Roger Vila, Mara K.N. Lawniczak and Mark Blaxter, 10 September 2025, Current Biology.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 5 =