
ই টি এইচ জুরিখের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক গবেষণায় প্রাচীন সমুদ্রের কার্বন স্তরের নতুন তথ্য উদঘাটন করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে যে পৃথিবীর প্রাথমিক জলের উৎসগুলোতে জৈব কার্বনের পরিমাণ আগে যা ভাবা গিয়েছিল তার চেয়ে কম ছিল।
গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রাচীন সমুদ্রের জৈব কার্বন পরিমাপের জন্য তারা ছোট, ডিম্বাকৃতি আয়রন অক্সাইড সমৃদ্ধ পাথর বা ওয়েড ব্যবহার করেছেন। এই পাথরগুলো দেখতে সাধারণ বালির দানার মতো হলেও এগুলো সমুদ্রের তলদেশে ধীরে ধীরে স্তরবদ্ধভাবে গড়ে ওঠে। সমুদ্রের জলে থাকা জৈব কার্বনের অণু পাথরের ভেতরে আটকে যায় এবং এটি হয়ে যায় টাইম ক্যাপসুল, যা প্রায় ১.৬৫ বিলিয়ন বছর আগের সমুদ্রের কার্বনের মাত্রা ধারণ করে রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১,০০০ থেকে ৫৪১ মিলিয়ন বছর আগে প্রাচীন সমুদ্রে জৈব কার্বনের পরিমাণ বর্তমানের তুলনায় ৯০-৯৯ শতাংশ কম ছিল। এর অর্থ, আগের ধারণা সঠিক নয়। আগে ভাবা হত সমুদ্রের বিশাল কার্বন সংরক্ষণই তুষারযুগ এবং জটিল জীবনের উদ্ভবের জন্য দায়ী ছিল। এখন বোঝা যাচ্ছে জীবনের বিবর্তন এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার জন্য নতুন কোনো তত্ত্ব প্রয়োজন।
কিন্তু কার্বন সমুদ্রের মধ্যে কিভাবে আসে? একদিকে, বাতাস থেকে কার্বন- ডাই- অক্সাইড সমুদ্রে দ্রবীভূত হয় এবং সমুদ্রের গভীরে পৌঁছায়। অন্যদিকে, সূর্যের আলো ব্যবহার করে সালোকসংশ্লেষণকারী অণুজীব, যেমন- ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন কিংবা ব্যাকটেরিয়া, জৈব কার্বন তৈরি করে। অণুজীবের মৃত্যু হলে তা সমুদ্রের তলদেশে “মেরিন স্নো” হিসেবে পড়ে। তখন কার্বন কিছুদিনের জন্য সমুদ্রের গভীরে থাকে এবং পরে সংরক্ষিত হয়।
গবেষকরা আরও দেখেছেন যে, প্রাচীন বড় অণুজীব মারা যাওয়ার পর দ্রুত সমুদ্রের তলদেশে একই ভাবে পড়ে থাকত । গবেষণাটি পৃথিবীর ইতিহাসে অক্সিজেন বিপর্যয়ের মতো এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের ওপর আলোকপাত করে। ২.৪ থেকে ২.১ বিলিয়ন বছর আগে প্রথমবার সেই সময় সমুদ্রের গভীরে অক্সিজেনের অভাবে কার্বন পুনর্ব্যবহৃত হতে পারেনি। তাই প্রাচীন সমুদ্রের জৈব কার্বনের পরিমাণ হঠাৎ কমে গিয়েছিল। পরে ৬০০ মিলিয়ন বছর আগে দ্বিতীয় অক্সিজেন বিপর্যয়ের সময় সমুদ্রের গভীরে অক্সিজেন জমা হলে কার্বন পুনরায় বৃদ্ধি পায়।
সে সময় পৃথিবীতে চলছিল ভয়ঙ্কর তুষার যুগ। তখন পুরো পৃথিবী বরফে ঢেকে গিয়েছিল। এই অক্সিজেন বৃদ্ধিই জীবদের শক্তি উৎপাদনের নতুন পথ খুলে দেয়, আর সেখান থেকেই শুরু হয় জটিল জীবনের বিকাশ।
এই গবেষণা প্রমাণ করে, অতীতে সমুদ্রের কার্বন মাত্রার পরিবর্তন ও অক্সিজেনের ওঠানামা পৃথিবীর জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করেছে।
আজ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের মাধ্যমে সমুদ্রের অক্সিজেন কমিয়ে দিচ্ছে যা ভবিষ্যতে একই ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
সূত্র : “The geologic history of marine dissolved organic carbon from iron oxides” by Nir Galili, Stefano M. Bernasconi,et.al;(13.08.2025), Nature.
DOI: 10.1038/s41586-025-09383-3