নিসার-এর চোখে পৃথিবী

নিসার-এর চোখে পৃথিবী

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ অক্টোবর, ২০২৫

পৃথিবী পর্যবেক্ষণের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় শুরু করেছে নিসার (নাসা- ইসরো সিন্থেটিক অ্যাপারচার রেডার) । এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত রেডার উপগ্রহ। এই উপগ্রহটি ইতিমধ্যেই তার প্রথম পরীক্ষামূলক ছবিগুলো প্রকাশ করেছে, যা বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে নিখুঁত স্পষ্টতা ও বিশদ বিবরণের জন্য।
২০২৫ সালের ৩০ জুলাই ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো উপগ্রহটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে। আগস্টের শেষ দিকে এর রেডার সিস্টেম চালু হয় পরীক্ষামূলকভাবে, এবং তখনই দেখা যায় এর আশ্চর্য ক্ষমতা। পৃথিবীর ৭৪৭ কিলোমিটার উচ্চতায় প্রদক্ষিণরত এই উপগ্রহটি প্রথম ছবি তোলে যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যের মাউন্ট ডেজার্ট আইল্যান্ডের । ছবিতে দেখা যায়—সবুজ ঘন বন, কালো ছায়ামাখা জলাশয়, আর উজ্জ্বল ম্যাজেন্টা রঙে ফুটে ওঠা বহুতল বাড়ি ও উন্মুক্ত ভূমি। এমনকি কয়েক ফুট চওড়া খাল, নদী আর ক্ষুদ্র দ্বীপও স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।
আরেকটি ছবিতে উত্তর ডাকোটার ফরেস্ট রিভার অঞ্চলকে ধরা হয়েছে, যেখানে চিহ্নিত করা গেছে বন, জলাভূমি ও কৃষিক্ষেত্র। সয়াবিন, ভুট্টা ও পরিত্যক্ত জমির পার্থক্য পর্যন্ত নির্ভুলভাবে বোঝা যায় ছবিতে।
অন্য উপগ্রহের মতো ক্যামেরা নয়, নিসার ব্যবহার করে রেডার প্রযুক্তি, যা মাইক্রো তরঙ্গ পাঠিয়ে ভূমি, বন বা বরফের স্তর থেকে প্রতিফলিত সংকেত বিশ্লেষণ করে। এতে বোঝা যায় মাটির আর্দ্রতা, বনাঞ্চলের ঘনত্ব, এমনকি মেরু অঞ্চলের বরফের পরিবর্তনও।
এতে রয়েছে দুটি রেডার সিস্টেম —
১) L-ব্যান্ড (নাসা নির্মিত): নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি (জেপিএল) দ্বারা নির্মিত লম্বা তরঙ্গদৈর্ঘ্য, যা বনভূমির ভেতর পর্যন্ত দেখতে পায় এবং ভূমিকম্প, ভূমিধস, আগ্নেয়গিরির ক্ষুদ্র নড়াচড়াও শনাক্ত করতে পারে।
২) S-ব্যান্ড (ইসরো নির্মিত): সূক্ষ্ম উদ্ভিদ ও ফসল পর্যবেক্ষণে বিশেষভাবে কার্যকর, যা কৃষিক্ষেত্রের স্বাস্থ্য বুঝতে সাহায্য করবে।
এই দুই রেডার একসঙ্গে পৃথিবীর ভূমি ও বরফের পৃষ্ঠ প্রতি ছয় দিনে দুইবার স্ক্যান করবে—এক বিশাল ১২ মিটার ব্যাসের অ্যান্টেনা দিয়ে। এর আগে নাসা এত বড় রেডার ডিশ পাঠায়নি।
এই মিশন শুধু প্রযুক্তিগত নয়, এক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতীক।
ইসরো নির্মাণ করেছে উপগ্রহটির গঠন ও উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা, আর নাসা ডিজাইন করেছে উন্নত রেডার ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি।
নাসার প্রশাসক শন ডাফি বলেছেন নিসার কেবল একটি মামুলী উপগ্রহ নয়, নিসার ভবিষ্যতের বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষের প্রতীক।
২০২৫- এর নভেম্বর মাস থেকে শুরু হবে এর পূর্ণ বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম।নিসারের তথ্য শুধু পৃথিবীর পরিবর্তনই নয়,অন্য গ্রহের ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া বুঝতেও সাহায্য করবে। নাসার সহযোগী প্রশাসক অমিত ক্ষত্রিয় বলেন, “যত ভালোভাবে আমরা পৃথিবীকে বুঝব, ততই ভালোভাবে চাঁদ ও মঙ্গলের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারব।”

নিসার কেবল ছবি তুলছে না, পরিবর্তিত পৃথিবীর প্রতিটি হৃদস্পন্দন মাপছে। আরও স্পষ্ট, আরও জ্ঞানসমৃদ্ধ, আরও ভবিষ্যতমুখী উপায়ে।

সূত্র: NASA-ISRO Satellite Sends First Radar Images of Earth’s Surface by Gerelle Q. Dodson,(2.10.2025), Information from a NASA online press release.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − two =