টি.রেক্সের পূর্বপুরুষ “ড্রাগন যুবরাজ ”

টি.রেক্সের পূর্বপুরুষ “ড্রাগন যুবরাজ ”

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

বিজ্ঞানীরা অবশেষে আবিষ্কার করেছেন সেই রহস্যময় সেতুবন্ধন, যা পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শিকারি টিরানোসরাস রেক্স (টি.রেক্স)-এর সঙ্গে যুক্ত করছে তার পূর্বপুরুষকে। নতুন এই প্রজাতিটির নাম খানখুলু। যার অর্থ মঙ্গোলীয় ভাষায় ড্রাগন রাজপুত্র।এটি এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া টি. রেক্সের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ পূর্বপুরুষ, যা প্রায় ৮৬ মিলিয়ন বছর আগে বেঁচে ছিল।

সম্প্রতি এই বিস্ময়কর আবিষ্কারটি করেছেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগারির বিজ্ঞানী জারেড ভোরিস ও ড.দারলা জেলেনিৎসকির নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল। তাদের এই গবেষণার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে নেচার সাময়িকীতে। ভোরিস জানান, খানখুলু এমন এক যুগে বাস করত, যখন বৃহদাকার মাংসাশী ডাইনোসরদের আধিপত্য কমে যাচ্ছিল, আর নতুন প্রজাতির দ্রুতগতি শিকারিদের উত্থান ঘটছিল।

খানখুলুর ওজন ছিল প্রায় ৭৫০ কিলোগ্রাম অর্থাৎ, একটি পূর্ণবয়স্ক ঘোড়ার সমান।টি. রেক্সের তুলনায় তিনগুণ ছোট হলেও এর গতি ও চাতুর্য ছিল অসাধারণ। এর খুলি ছিল লম্বা ও চ্যাপ্টা, তাই এটি টি. রেক্সের মতো শক্ত হাড় ভাঙতে পারত না। বরং এটি ছিল এক দ্রুতগতিসম্পন্ন মধ্যম স্তরের শিকারি, আজকের কায়োট বা উত্তর আমেরিকার রূপালি-ধূসর পশমওয়ালা কুকুরের মতো, যারা গতি ও বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে শিকার ধরত। খানখুলুর মাথায় ছিল ছোট ছোট শিং-এর মতো উঁচু অংশ, যা পরে অ্যালবার্টোসরাস বা গর্গোসরাস প্রজাতিতে আরও বড় হয়ে উঠেছিল।সম্ভবত সঙ্গীকে মিলনে আকর্ষণ বা ভয় দেখানোর কাজে লাগতো এটি।

খানখুলুর জীবাশ্ম মেলে মঙ্গোলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বের বায়ানশিরি স্তর নামক ভূতাত্ত্বিক গঠন থেকে। প্রথমে ১৯৭০-এর দশকে জীবাশ্মবিদ আলতানগেরেল পার্লে এগুলোকে অন্য এক প্রজাতি অ্যালেক্ট্রোসরাস-এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। কিন্তু ২০২৩ সালে ভোরিস মঙ্গোলিয়ায় গিয়ে জীবাশ্মগুলো সরাসরি বিশ্লেষণ করে দেখেন, এদের হাড়ের গঠন সম্পূর্ণ আলাদা, যা নতুন এক প্রজাতির নিদর্শন।

ড. জেলেনিৎসকির মতে, প্রায় ৮৫ মিলিয়ন বছর আগে খানখুলু বা তার আত্মীয় কোনো প্রজাতি এশিয়া থেকে উত্তর আমেরিকায় অভিবাসন করে, এবং সেখানেই বৃহদাকার টিরানোসরের উদ্ভব ঘটে। এটি প্রমাণ করে যে টিরানোসরদের বিবর্তন আসলে উত্তর আমেরিকাতেই ঘটেছিল।আগে কিন্তু বিজ্ঞানীরা ভিন্নভাবে ভেবেছিলেন।

খানখুলু ছিল এশিয়ার জীবাশ্ম-রেকর্ডে টিরানোসরের শেষ পূর্বপুরুষ। গবেষণা বলছে, এই প্রজাতি বা এর আত্মীয়রা স্থলপথে আমেরিকায় পাড়ি দেয়, যেখানে তারা রূপান্তরিত হয় বৃহদাকার শিকারি টি.রেক্সে। কিছু শাখা আবার বিবর্তিত হয় ছোট, লম্বা-মুখওয়ালা “পিনোচ্চিও রেক্স”-এ।

এই ড্রাগন যুবরাজ যেন সেই মধ্যবর্তী সোপান, যার কাঁধে দাঁড়িয়ে জন্ম নিয়েছিল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শিকারি টিরানোসরাস রেক্স।

 

সূত্র : “A new Mongolian tyrannosauroid and the evolution of Eutyrannosauria” by Jared T. Voris, Darla K. Zelenitsky,et.al;(11.06.2025),published in “Nature” journal.

DOI: 10.1038/s41586-025-08964-6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − 1 =