সাগরপৃষ্ঠ দ্রুত উঠে আসছে

সাগরপৃষ্ঠ দ্রুত উঠে আসছে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ অক্টোবর, ২০২৫

বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ আজ যে গতিতে উঠছে, তা গত চার হাজার বছরে সর্বাধিক। রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে পৃথিবীর উপকূলীয় অঞ্চলগুলি এক অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মুখে দাঁড়িয়ে গেছে, যার মূল কারণ মানুষের কর্মকাণ্ড ও বিশ্বজোড়া উষ্ণায়ন। গবেষক দলটি সমুদ্রপৃষ্ঠের দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন নির্ণয় করতে প্রাচীন প্রবালচর ও ম্যানগ্রোভ অরণ্যের স্তর বিশ্লেষণ করেন। এটি প্রাকৃতিক “সমুদ্রস্তর আর্কাইভ” হিসেবে কাজ করে। এই রেকর্ড থেকে দেখা গেছে, গত চার সহস্রাব্দে সমুদ্রপৃষ্ঠের ওঠানামা তুলনামূলক ধীর ছিল। কিন্তু ১৯০০ সালের পর থেকে সেই গতি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। প্রধান গবেষক ইউচেং লিন বলেন, “১৯০০ সাল থেকে গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ যেভাবে বাড়ছে, তা অন্তত গত ৪০০০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন প্রকৃতির ভারসাম্য ভেঙে দিচ্ছে।“গবেষণায় উঠে এসেছে, এই উর্ধ্বগতির পেছনে দুটি প্রধান কারণ কাজ করছে-

১. উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জল গরম হচ্ছে, ফলে জলের আয়তন বাড়ছে।

২. গ্রীনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার বিশাল বরফচাদর দ্রুত গলছে, যা সরাসরি সমুদ্রে অতিরিক্ত জল যোগ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দুটি প্রক্রিয়া মিলিতভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থানের গতি বাড়িয়ে তুলেছে এমন এক পর্যায়ে, যা মানবসভ্যতার ইতিহাসে নজিরবিহীন। কিছু উপকূলীয় মহানগর শুধুমাত্র সমুদ্রের উত্থানের দরুন নয়, নিজেদের নীচে বসে যাওয়াতেও বিপদে পড়ছে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ভূমিস্বল্পতা (subsidence)। এটি ভূগর্ভস্থ জল অতিরিক্ত পরিমাণে তোলার ফলে ঘটে।

চীনের শাংহাই, শেনঝেন এবং হংকং-এর মতো শহরগুলিতে এই ভূমি-সংকোচন সবচেয়ে বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত শতাব্দীতে শাংহাইয়ের কিছু অঞ্চল এক মিটার পর্যন্ত বসে গেছে। ফলে সমুদ্রের বাড়তি জল সেই এলাকাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে। ইয়াংৎসে ও পার্ল নদীর ডেল্টা, দ্বীপ অঞ্চলগুলি উর্বর ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। কৃষি, শিল্প ও নগর উন্নয়নের কেন্দ্র হওয়ায় এই অঞ্চলগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ উঠে আসার প্রভাবের সবচেয়ে বড় শিকার হতে পারে। মাত্র এক মিলিমিটার জলস্তর বৃদ্ধি অনেক সময় বন্যা বা ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতি বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। রাটগার্স দলের সদস্যরা সতর্ক করেছেন, “আমরা যদি এখনই পদক্ষেপ না নিই, জল উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ, উপকূল রক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস না করি, তবে অনেক শহর স্থায়ীভাবে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।“সবাই যে হাত গুটিয়ে বসে আছে, তা নয়। উদাহরণ হিসেবে শাংহাই শহরে বর্তমানে ভূগর্ভস্থ মিঠা জলের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এবং নীচের স্তরে পুনরায় জল প্রবেশ করিয়ে ভূমির সংকোচন কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

সূত্র: “Modern sea-level rise breaks 4,000-year stability in southeastern China” by Yucheng Lin, et.el; 15 October 2025, Nature.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − ten =