ওষুধ গবেষণায় কৃ বু – কৃতিত্ব 

ওষুধ গবেষণায় কৃ বু – কৃতিত্ব 

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ নভেম্বর, ২০২৫

নতুন ওষুধ তৈরির পথটি অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল। হাজারো রাসায়নিক যৌগ পরীক্ষা করে, প্রাণীদেহে এবং অবশেষে মানবদেহে ট্রায়াল চালনো হয়। শেষ পর্যন্ত এর মধ্যে মাত্র কয়েকটিই সফলতা পায়। বাকিগুলি ব্যর্থ হয়। এহেন অবস্থায় নতুন এক আশার আলো দেখিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (কৃ বু)। সম্প্রতি একদল গবেষক এমন এক অ্যালগরিদম তৈরি করেছেন যা মানুষের কোষের তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য ওষুধের দাবিদারকে শনাক্ত করতে পারে। প্রচলিত পরীক্ষার তুলনায় এটিতে সময় ও খরচ অনেক কম লাগে। এটিই হতে পারে নতুন যুগের সূচনা, যেখানে ওষুধ তৈরি আর কেবল “পরীক্ষা-নির্ভর” নয়, বরং “তথ্য-নির্ভর”হয়ে উঠবে। গবেষক দলটি যে কৃ বু মডেলটি তৈরি করেছেন, সেটি মানুষের কোষ থেকে সংগৃহীত জিনগত ও প্রোটিন সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করে। সেখানে দেখা হয়, নির্দিষ্ট কোন রাসায়নিক যৌগ কোষের ভিতরে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে, এবং সেটি রোগ-নিয়ন্ত্রণে কতটা কার্যকর হতে পারে। মডেলটি কার্যত ‘ওষুধের আয়না’র মতো কাজ করে। প্রতিটি নতুন যৌগকে পরীক্ষা করার আগে বিশ্লেষণ করে সে বলে দেয় কোনটি সবচেয়ে সম্ভাবনাময়। প্রচলিত ল্যাবরেটরি পদ্ধতিতে যেখানে মাসের পর মাস লাগে, সেখানে এই মডেল কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শত শত যৌগের সম্ভাব্য ফলাফলের পূর্বাভাস দিতে পারে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই পদ্ধতি প্রচলিত রাসায়নিক ঝাড়াই বাছাই (স্ক্রিনিং) বা বৃহৎ যৌগভাণ্ডার-পরীক্ষার তুলনায় প্রায় ১৭ গুণ বেশি দক্ষ। এমনকি এই যন্ত্রবুদ্ধি পদ্ধতি “জৈব তথ্যের অভিধান”হিসেবেও কাজ করতে পারে। একদিকে এটি মানব-কোষের প্রতিক্রিয়া বুঝতে শেখে। অন্যদিকে শেখে কোন যৌগগুলি নির্দিষ্ট রোগ-সংক্রান্ত জিনের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে। এইভাবে, একসময় ধীরে ধীরে ওষুধ বাছাই-এর যে কাজটি মানুষ করত অসংখ্য পরীক্ষার মাধ্যমে, এখন সেই সিদ্ধান্তের প্রাথমিক পর্বটি মেশিনই সারতে পারবে। ফলে ওষুধ উন্নয়ন দ্রুততর হবে, খরচ কমবে, এবং নতুন রোগ বা মহামারীর সময়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হবে। আশা করা যাচ্ছে, এই প্রযুক্তি বিরল ও জটিল রোগ, যেমন -স্নায়ু অবক্ষয়জনিত রোগ, ক্যান্সার কিংবা অটোইমিউন অসুস্থতা নিয়ে কর্মরত বিজ্ঞানীদের নতুন দিক দেখাতে পারবে। তবে সবের মাঝেও রয়েছে কিছু কঠিন বাস্তবতা। যন্ত্রবুদ্ধি-ভিত্তিক এই মডেল যতই উন্নত হোক না কেন, তা কখনই পরীক্ষাগার ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বিকল্প হতে পারে না। “অ্যালগরিদম ভবিষ্যদ্বাণী দিতে পারে, কিন্তু চিকিৎসা-বাস্তবতা যাচাই করেই দেখতে হয়।”অর্থাৎ মডেল যেমনভাবে ফলাফল অনুমান করে, তা যে কোষ বা প্রাণীদেহে সবসময় মিলবে এমন নিশ্চয়তা নেই। এছাড়া, তথ্যের গুণমান এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষের কোষীয় তথ্য যথেষ্ট নির্ভুল বা বৈচিত্র্যময় না হলে মডেলের পূর্বাভাসও ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে। সঙ্গে আছে তথ্য-গোপনীয়তা ও নৈতিকতার প্রশ্ন। এত বিপুল জৈব তথ্যের ব্যবহারে সুরক্ষা ও স্বচ্ছতা রক্ষা করাও এক বড় দায়িত্ব। তবে বলতেই হয়, ওষুধ গবেষণার কয়েক শতাব্দী-প্রাচীন গোলকধাঁধায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেন নতুন এক কম্পাস।

 

সূত্র : “This AI method could turbocharge the hunt for new medicines” (Nature, 23rd Oct, 2025)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × four =