প্লাস্টিকে ভরা সমুদ্র এখন নিজেই তার প্রতিষেধক খুঁজে নিচ্ছে। সৌদি আরবের কিং আবদুল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (KAUST) গবেষকরা সম্প্রতি এমন এক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন, যারা প্লাস্টিককেই খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে সক্ষম। এই আবিষ্কার প্রমাণ করছে, মানুষের তৈরি দূষণের প্রতিক্রিয়ায় প্রকৃতি নিজেই অভিযোজনের নতুন পথ তৈরি করছে। পলিথিন টেরেফথ্যালেট বা পিইটি (PET) দিয়ে বোতল, খাদ্যপাত্র বা সিন্থেটিক কাপড় তৈরি হয়। এরা পরিবেশে শত শত বছর অপরিবর্তিত থাকে। কিন্তু ২০১৬ সালে জাপানের একটি রিসাইক্লিং কেন্দ্রে প্রথম দেখা যায়, এক ব্যাকটেরিয়া প্লাস্টিক ভেঙে তার ওপর বেঁচে থাকতে পারে। KAUST–এর সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, সমুদ্রেও আছে এমন ব্যাকটেরিয়া। এদের শরীরে পিইটেজ নামক উৎসেচকের একটি বিশেষ গঠন ‘এম৫ মোটিফ’ থাকলে তারা আশ্চর্যরকম দক্ষতায় প্লাস্টিক ভাঙতে সক্ষম হয়। বিজ্ঞানীরা সারা বিশ্বের সমুদ্রজল বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, প্রায় ৮০ শতাংশ সাগরে এম৫ মোটিফযুক্ত ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। কেবল উপরের স্তরে নয়, দুই কিলোমিটার গভীরতাতেও। এই তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, সমুদ্রের অণুজীবরা মানুষের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের সঙ্গে অভিযোজিত হয়ে বিবর্তিত হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জিন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পরীক্ষাগারে এম৫ মোটিফযুক্ত উৎসেচক পিইটি প্লাস্টিককে দ্রুত ক্ষুদ্র অণুতে ভেঙে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করে। অর্থাৎ প্লাস্টিকই তাদের খাদ্য। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই প্রক্রিয়া খুব ধীর। প্লাস্টিক সমুদ্রের তলায় ডুবে থেকে বহু বছর সামুদ্রিক প্রাণ ও খাদ্যচক্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই এই ‘প্লাস্টিকখেকো’ ব্যাকটেরিয়া কোনো তাৎক্ষণিক সমাধান নয়। বরং প্রকৃতির প্রতিরোধশক্তির এক সূক্ষ্ম ইঙ্গিত। গবেষকরা এখন এম৫ মোটিফকে এক ‘জীববৈজ্ঞানিক ‘নির্মাণ নকশা’ হিসেবে দেখছেন, যার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী উৎসেচক তৈরি সম্ভব হবে। বায়োটেকনোলজির সহায়তায় এই তথ্য ব্যবহার করে শিল্প পর্যায়ে প্লাস্টিক ভাঙন বা পুনঃপ্রক্রিয়াকরণে বিপ্লব ঘটানো যেতে পারে। তবে সমুদ্রের বিশাল প্লাস্টিক স্তূপের তুলনায় এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া এখনও নগণ্য।
সূত্র : “Widespread distribution of bacteria containing PETases with a functional motif across global oceans” by Intikhab Alam, Ramona Marasco, Afaque A Momin, et.el; 10 June 2025, The ISME Journal.
