আইআইটি-মাদ্রাজের বিমানবিজ্ঞান ও মহাকাশ প্রকৌশল বিভাগের একদল গবেষক সম্প্রতি এমন এক রকেট ইঞ্জিনের পরীক্ষা করেছেন, যা ভবিষ্যতের ড্রোন ও বিমান প্রযুক্তিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এই ইঞ্জিনের নাম হাইব্রিড রকেট থ্রাস্টার। এ এমন এক ধরনের ইঞ্জিন যা রকেটের মতো শক্তিশালী, আবার বিমানের মতো নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এর সবচেয়ে বড় দিক হলো, এটি উল্লম্বভাবে উঠতে ও নামতে সক্ষম। অর্থাৎ এই প্রযুক্তি এমন উড়োজাহাজ বা ড্রোন তৈরি করতে সাহায্য করবে, যেগুলো রানওয়ে ছাড়াই সোজা ওপরের দিকে উড়তে এবং সোজা নীচে নেমে আসতে পারবে, হেলিকপ্টারের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষভাবে। এই নতুন থ্রাস্টার কাজ করে দুই ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করে। একটি কঠিন (সলিড ফুয়েল) এবং অন্যটি গ্যাসীয় (অক্সিডাইজার বা বায়ু)। ফলে এতে রকেট ইঞ্জিনের শক্তি যেমন আছে, তেমনই বিমানের ইঞ্জিনের মতো নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তাও বজায় থাকে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই থ্রাস্টার ব্যবহার করে খুব ধীর ও নিয়ন্ত্রিত গতিতে অবতরণ করা যায়- প্রায় প্রতি সেকেন্ডে ০.৬৬ মিটার বেগে, যা “সফট ল্যান্ডিং” বা আস্তে আস্তে নামার জন্য উপযুক্ত। গবেষকরা বাস্তব থ্রাস্টারটিকে ভার্চুয়াল সিমুলেশন বা কম্পিউটার মডেলের সঙ্গে মিলিয়ে পরীক্ষা করেছেন। যাকে বলে হার্ডওয়্যার-ইন-দ্য-লুপ সিমুলেশন। এর মানে হলো, বাস্তব যন্ত্র ও কম্পিউটার-ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ একসঙ্গে কাজ করেছে, যাতে ভবিষ্যতের বিমান পরীক্ষায় সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়। আইআইটি-মাদ্রাজের এই উদ্ভাবনের লক্ষ্য, এমন এক ইঞ্জিন তৈরি করা, যা রানওয়ে-বিহীন জায়গাতেও উঠতে নামতে পারে। ফলে দূরবর্তী বা দুর্গম এলাকায় ড্রোন বা ছোট উড়োজাহাজ ব্যবহার করা অনেক সহজ হবে। এই প্রযুক্তি শুধু গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ নয়। ভবিষ্যতে এটি বেসামরিক বিমান পরিবহন থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর বিশেষ মিশন- দুই ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বড় বিমানবন্দর নেই, সেখানে দ্রুত পণ্য বা সাহায্য পৌঁছে দিতে এটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এখন তারা একাধিক থ্রাস্টার একসঙ্গে ব্যবহার ও উড়ন্ত অবস্থায় ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। পরবর্তী ধাপে আরও উন্নত পরীক্ষা চালানো হবে যাতে এই ইঞ্জিন বাস্তবে ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে। সুতরাং রকেটের শক্তি আর বিমানের নিয়ন্ত্রণ একসঙ্গে মিশে তৈরি হবে এমন উড়োজাহাজ ও ড্রোন, যা কম জায়গা, কম পরিকাঠামো, কিন্তু বেশি সক্ষমতায় কাজ করতে পারবে।
সূত্র : Indian Institute of Technology Madras; Indian Defence Research wing; 31st OcT, 2025
