দাঁতের সুরক্ষায় চুলের কেরাটিন

দাঁতের সুরক্ষায় চুলের কেরাটিন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ নভেম্বর, ২০২৫

সম্প্রতি লন্ডনের কিংস কলেজের একদল বিজ্ঞানী এমন এক টুথপেস্ট তৈরি করেছেন, যার মূল উপাদান মানুষের চুল। হ্যাঁ শুনতে অবাক লাগলেও, গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের চুলে থাকা প্রোটিন কেরাটিন দাঁতের ক্ষয়ে যাওয়া এনামেল (দাঁতের বাইরের শক্ত স্তর) পুনর্গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
কেরাটিন এমন এক বিশেষ প্রোটিন, যা চুল, ত্বক এবং পশমে প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান। গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, কেরাটিন যখন লালার মধ্যে থাকা খনিজ পদার্থের (যেমন -ক্যালসিয়াম ও ফসফেট আয়ন) সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে, তখন এটি দাঁতের উপরে একটি সুরক্ষাদায়ী শক্ত স্তর তৈরি করে যা প্রকৃত এনামেলের মতোই মজবুত ও কার্যকর।
প্রধান গবেষক ড. শরীফ এলশারকাউই জানান, দাঁতের এনামেল একবার ক্ষয় হলে তা আর স্বাভাবিকভাবে পুনরায় তৈরি হয় না। প্রতিদিনের টক জাতীয় খাবার, নিয়মিত দিনে অন্তত দু’বার দাঁত না মাজা এবং বয়সের প্রভাবে এই এনামেল ক্ষয় পেতে থাকে। এবং এই ক্ষয়ের দরুন দাঁতের সংবেদনশীলতা কমে, দাঁত ক্ষয়ে যায় ,ব্যথা হয়, এমনকি ও দাঁত পড়ে যায়।
বর্তমানে বাজার চলতি ফ্লোরাইড টুথপেস্ট দাঁতের ক্ষয় প্রক্রিয়াকে কেবলমাত্র বিলম্বিত করে, কিন্তু এই নতুন কেরাটিন-ভিত্তিক টুথপেস্ট সে ক্ষয় সম্পূর্ণ রোধ করতে পারে। তার সাথে সাথে এটি দাঁতের উপর ঘন খনিজের স্তর গঠন করে, সংবেদনশীল নার্ভকে শিথিল রাখে। তাই ঠাণ্ডা বা গরম জাতীয় খাবার খেলেই দাঁত শিরশিরিয়ে ওঠে না, ব্যথা হয় না এবং দাঁতের কাঠামোগত শক্তি ফিরে আসে।
এই টুথপেস্টটিকে প্রাত্যহিক সাধারণ টুথপেস্ট হিসেবে অথবা বিশেষ জেল আকারেও প্রয়োগ করা সম্ভব। যেমন নখের পালিশের মতো।গবেষকদের বিশেষ আশা, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই এটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসবে।
এই গবেষণায় ব্যবহৃত কেরাটিন নেওয়া হয়েছে উল থেকে। দেখা গেছে, দাঁতের উপর এটি লাগানোর পর লালার খনিজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একধরনের কেলাস জাতীয় কাঠামো তৈরি হয়, যা প্রাকৃতিক এনামেলের গঠন ও কার্যকারিতার মতোই কাজ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই কাঠামো ক্যালসিয়াম ও ফসফেট টেনে এনে এক নতুন এনামেল-সদৃশ আবরণ গড়ে তোলে।
গবেষক সারা গামেয়া বলেন, এই পদ্ধতি চিকিৎসাগতভাবে কার্যকর তো বটেই, তাছাড়া পরিবেশবান্ধব ও টেকসই। কারণ, এর কাঁচামাল আসে চুল, ত্বক বা উল প্রভৃতি জৈব বর্জ্য থেকে। এতে প্লাস্টিক রেজিনের মতো ক্ষতিকর পদার্থের দরকার পড়ে না এবং এটির রঙ দাঁতের প্রাকৃতিক রঙেরই মতো ।

সব মিলিয়ে এই আবিষ্কার স্বাস্থ্যসেবার টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এক বড় পদক্ষেপ। ড. এলশারকাউইয়ের মতে আমরা এমন এক যুগে প্রবেশ করছি, যেখানে নিজের দেহের উপাদান দিয়েই জৈবপ্রযুক্তি শরীরের ছোটোখাটো ক্ষতি মেরামত করতে পারবে।

সূত্র: “Biomimetic Mineralization of Keratin Scaffolds for Enamel Regeneration” by Sara Gamea, Elham Radvar, et.al;(12.08.2025), Advanced Healthcare Materials.
DOI: 10.1002/adhm.202502465

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 13 =