‘ জাপানের কাচের ছাদ’

‘ জাপানের কাচের ছাদ’

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

জাপানে সানায়ে তাকাইচি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত কি শুধুই প্রতীকি, না এটি জাপানের বৈজ্ঞানিক সমাজে বহু দশকের লিঙ্গবৈষম্যের উপর বাস্তবিকই আঘাত হানবে? বিশ্বজুড়ে যখন নেতৃত্বে নারীর উপস্থিতি ক্রমে বাড়ছে, জাপান বরাবরই পিছিয়ে থেকেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সাম্প্রতিক গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স ২০২৫ অনুযায়ী, জাপান রয়েছে ১৪৮টি দেশের মধ্যে ১১৮তম স্থানে। অর্থাৎ, নারী-পুরুষের সুযোগ ও প্রতিনিধিত্বের ব্যবধান এখনও গভীর। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতে এই বৈষম্য প্রায় কাঠামোগত। তাকাইচি যদিও নিজেকে নারীবাদী হিসেবে তুলে ধরেননি, তবুও তাঁর নেতৃত্ব অনেক নারী গবেষকের কাছে প্রতীকের চেয়েও বড় অর্থ বহন করছে। এক জাপানি বিজ্ঞানী বলেছেন, “আমরা চাই, তিনি যেন শুধুই প্রতীক হয়ে না থাকেন, যেন আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার কণ্ঠস্বর হন”। বিজ্ঞান খাতে জাপানের নারীরা প্রায় প্রতিটি ধাপে বাধার মুখে পড়েন। পরিসংখ্যান বলছে, জাপানের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নারী অধ্যাপক বা প্রধান গবেষকের সংখ্যা এখনও ২০ শতাংশের নীচে। অনেক নারী বিজ্ঞানী মাতৃত্বকালীন বিরতি শেষে আর গবেষণায় ফিরে আসেন না, কারণ সহায়ক নীতি ও পরিকাঠামোর অভাব। এশিয়ার অন্যতম প্রযুক্তিউন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও জাপান বিজ্ঞানের প্রশাসনিক স্তরে নারীর অংশগ্রহণে চরম পিছিয়ে। গবেষণা অনুদান, সম্মেলনের প্যানেল, বা প্রকাশনা—সবখানেই পুরুষের প্রাধান্য। আন্তর্জাতিক গবেষক সমাজে এই পরিস্থিতি পরিচিত “জাপানের কাচের ছাদ” নামে। এ এক অদৃশ্য প্রাচীর যা নারী বিজ্ঞানীদের সাফল্য সীমিত করে রাখে। তাকাইচির সরকারের নীতি এখনও স্পষ্ট নয়। তিনি বলেছেন, তাঁর লক্ষ্য “জাপানকে পুনরায় উদ্ভাবনশীল শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা।“ কিন্তু সমালোচকদের মতে, সেই লক্ষ্য পূরণ অসম্ভব যদি দেশের অর্ধেক মেধা অর্থাৎ নারী বিজ্ঞানীরা পিছনে পড়ে থাকেন।
নারী নেতৃত্ব মানেই যে সমাজে নারীর অবস্থান বদলে যাবে, ইতিহাস তেমন আশ্বাস দেয় না। অনেক দেশেই দেখা গেছে, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর সময়ে বাস্তব নীতিগত সংস্কার ঘটেনি। তাই তাকাইচির সাফল্য নির্ভর করবে, তিনি কতটা সাহসিকতার সঙ্গে লিঙ্গবৈষম্যের প্রশ্নকে রাজনীতির মূল আলোচনায় আনতে পারেন তার উপর। সমতা-ভিত্তিক নীতি, সহায়ক কর্মপরিবেশ, এবং নারী গবেষকদের জন্য বিশেষ অর্থায়ন, এসবই হতে পারে তাকাইচির সরকারের বাস্তব পরিবর্তনের সূচক। আর যদি তা না হয়, তবে তাঁর অভিষেক হয়তো ইতিহাসে এক প্রতীকী অধ্যায় হিসেবেই থেকে যাবে। আজ জাপান এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। তাকাইচির নেতৃত্ব শুধু রাজনীতির নয়, বরং বিজ্ঞানেরও পরীক্ষার মুখে। তিনি যদি সত্যিই গবেষণার কাচের ছাদ ভাঙতে পারেন, তবে এটি শুধু নারী নয়, গোটা দেশের বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির বিজয়ে পরিণত হবে।

সূত্র : Japan’s first female prime minister doesn’t call herself a feminist- but the country needs her to tackle sexism in science; Nature; 04 November 2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − nineteen =