দীর্ঘদিন ধরে জানা ছিল, সার্পিন বি ৩ নামের প্রোটিনটি হল ক্যান্সার ও দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগের জৈব নির্দেশক, সেটাই ওই প্রোটিনের একমাত্র বিশেষ ভূমিকা । কিন্তু অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি (এ এস ইউ)-এর গবেষকদের নতুন আবিষ্কার আমাদের সামনে এই প্রোটিন সম্পর্কিত একটি সম্পূর্ন নতুন তথ্য তুলে ধরেছে।ওনারা বলছেন এই একই প্রোটিন আমাদের শরীরের ক্ষত সারানোর প্রক্রিয়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ, যে প্রোটিন একদিকে রোগের ইঙ্গিত দেয়, সেই প্রোটিনই শরীরের ক্ষত নিরাময়ের পথ দেখায়।
সার্পিন বি ৩ সাধারণত তখনই রক্তে বেশি দেখা যায়, যখন শরীরের প্রতিরক্ষামূলক কোষকলা যেমন- চামড়া বা ফুসফুস ক্যান্সার বা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণে চাপে পড়ে। এতদিন একে আমরা চিনতাম এক ধরনের রোগের জৈব নির্দেশক হিসেবে, যা বিপজ্জনক ক্যান্সারের উপস্থিতি বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু ড. জর্ডান ইয়্যারন এবং ড. কৌশল রেগে-এর নেতৃত্বে পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রোটিনটি শরীরের ক্ষত সারানোর প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার অংশও বটে।
প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘস্থায়ী বা ধীরে সারে এমন ক্ষতের সমস্যায় ভোগেন – যেমন, ডায়াবেটিস, সংক্রমণ, পোড়া ঘা বা বার্ধক্যজনিত ক্ষত। এসব জেদি ক্ষত সারাতে প্রতি বছর প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হয়। এই নতুন গবেষণাটিতে প্রমাণ মিলেছে যে, সার্পিন বি ৩ প্রোটিনটি ওইসব জেদি ক্ষতের কোষকলার পুনর্গঠন ও নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যখন কোনো ক্ষত সেরে উঠতে শুরু করে, তখন সার্পিন বি ৩ -এর মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। বিশেষ করে যেখানে উন্নত জৈব পদার্থভিত্তিক ক্ষত ঢাকার উপাদান ব্যবহার করা হয় সেখানে এর এই বৃদ্ধি আরও লক্ষণীয়। পরীক্ষাগারে অতিরিক্ত সার্পিন বি ৩ যোগ করলে দেখা গেছে, এটি ত্বকের কোষগুলিকে (কেরাটিনোসাইট) দ্রুত চলাচল করতে এবং ক্ষতের স্থান ঢাকতে উৎসাহিত করে। ঠিক যেভাবে কাজ করে জনপ্রিয় নিরাময়কারী উপাদান এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর (ত্বকের আবরণী কোষকলার বৃদ্ধি উদ্দীপক পদার্থ)।
সার্পিন বি৩ মূলত ত্বকের কেরাটিনোসাইট নামক কোষগুলিকে সক্রিয় করে তোলে। এই কোষগুলো তখন কম আঠালো হয়ে আরও বেশি গতিশীল হয়ে ওঠে। যার ফলে তারা সহজে ক্ষতস্থানে পৌঁছে নতুন কোষকলা তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি এটি কোলাজেন ফাইবারগুলিকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজাতে সাহায্য করে, যা ত্বককে মজবুত ও স্থিতিশীল করে তোলে।
গবেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে সার্পিন বি ৩ -কে ব্যবহার করে এমন ওষুধ বা চিকিৎসা প্রযুক্তি তৈরি করা যেতে পারে, যা পুরনো বা দগদগে জেদি ক্ষতকে দ্রুত নিরাময় করবে। আবার অন্যদিকে, এর অতি সক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে রাখলে একে আক্রমণাত্মক ক্যান্সার প্রতিরোধী কৌশল হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই গবেষণা যে শুধুমাত্র ক্ষত সারানোর পথ দেখিয়েছে তাই নয় , বরং বুঝিয়েছে, আমাদের শরীরের ভেতরকার প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ও মেরামত ব্যবস্থার গভীরে আরও অনেক গুপ্ত সংযোগ লুকিয়ে আছে। এই যেমন সার্পিন বি৩-এর এই দ্বৈত চরিত্র— একদিকে রোগের বার্তাবাহক, অন্যদিকে রোগ নিরাময়ের সহায়ক। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সামনে এ এক রোমাঞ্চকর নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে।
সূত্র: “Squamous cell carcinoma antigen-1/SerpinB3 is an endogenous skin injury response element” by Jordan R. Yaron, Shubham Pallod, et.al; (23.10.2025), Proceedings of the National Academy of Sciences.
DOI: 10.1073/pnas.2415164122
