মানুষের দেহ কতটা এনার্জি খরচ করে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে পারে—এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে গবেষণা করছেন। বিশেষ করে আল্ট্রা-ম্যারাথন দৌড়বিদ, দীর্ঘ দূরত্বের সাইক্লিস্ট কিংবা ট্রায়াথলিটদের মতো চরম সহনশীল ক্রীড়াবিদরা এই অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কারেন্ট বায়োলজিতে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণা বলছে, মানুষের শরীরে একটি স্বাভাবিক “মেটাবলিক সিলিং” বা এনার্জি ব্যবহারের সর্বোচ্চ সীমা রয়েছে। যত প্রশিক্ষিতই হোক দীর্ঘমেয়াদে কেউই তার বেসাল মেটাবলিক রেট (বি এম আর)-এর ২.৫ গুণের বেশি ক্যালোরি খরচ করতে সক্ষম নয়। বিশ্রামে থাকলেও দেহকে উদ্দীপিত রাখতে যে ন্যূনতম এনার্জি লাগে তার পরিমাণকে বলে বেসাল মেটাবলিক রেট। আগে ধারণা ছিল মানুষ স্বল্প সময়ে তার বি এম আর-এর ১০ গুণ পর্যন্ত শক্তি খরচ করতে পারে। এটা অংশত সত্য হলেও একেবারেই দীর্ঘস্থায়ী নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, চরম প্রতিযোগিতার সময় কিছু অ্যাথলিট দিনে ৭,০০০–৮,০০০ ক্যালোরি পর্যন্ত পুড়িয়ে বি এম আর-এর ছয়–সাত গুণ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। কিন্তু কয়েক মাস বা বছরব্যাপী গড় হিসাব করলে শক্তি খরচ আবার নেমে আসে সেই নির্দিষ্ট সীমা ২.৪ থেকে ২.৫ গুণ বি এম আর—এর কাছাকাছি। অর্থাৎ দেহ স্বাভাবিকভাবেই একটি নির্দিষ্ট সীমার ওপরে নিজেকে দীর্ঘদিন চলতে দেয় না।
এই গবেষণার বিশেষত্ব হলো, এতে অংশ নেওয়া ১৪ জন অ্যাথলিটকে নজরে নজরে রাখা হয়েছে অত্যন্ত নির্ভুল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে। তাদের “ডবলি লেবেল্ড ওয়াটার” নামক বিশেষ পানীয় পান করানো হয়। এতে ডয়টেরিয়াম (ভারী হাইড্রোজেন) ও অক্সিজেন-১৮ আইসোটোপ থাকে। প্রস্রাবের মাধ্যমে নিঃসৃত আইসোটোপের বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত নির্ভুলভাবে হিসাব করতে পেরেছেন তারা কত পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করেছেন এবং মোট কত ক্যালোরি প্রত্যহ খরচ করেছেন। যখন আমরা ব্যায়াম করি শরীরের অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় হয়। তখন আমাদের দেহের অন্য অনেক ক্রিয়াকান্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে শক্তি বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। কম নড়াচড়া করা, দ্রুত ঘুম আসা, অল্পতেই ক্লান্তি অনুভব করা—এসবই দেহের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যাতে সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া এনার্জির খরচ সামলানো যায়।
তবুও ব্যতিক্রমী কিছু অতিমানবীয় সক্ষমতা থাকতে পারে বলে গবেষকেরা মনে করেন। এরা হয়তো এই সীমা সামান্য ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম। তবে সাধারণ মানুষের জন্য এই সীমা নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। সাধারণ মানুষের পক্ষে বছরে প্রতিদিন প্রায় ১১ মাইল দৌড়ে ২.৫ গুণ বি এম আর -এ পৌঁছানো অসম্ভব। বেশিরভাগ মানুষ শারীরিক আঘাত বা ক্লান্তিতেই থেমে যাবে, এই সীমায় পৌঁছানোর আগেই।
অর্থাৎ, মানুষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, দেহের ভেতরে এমন একটি জৈবিক সীমা রয়েছে, যাকে ছাপিয়ে দীর্ঘদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়। এটি মানবদেহের অভিযোজন ও সহনশীলতার গভীরতর বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়াকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেয়।
সূত্র: Ultra-endurance athletes and the metabolic ceiling by Andrew Best, Srishti Sadhir,et.al; published in A cell press journal current biology,(20.10.2025).
DOI: 10.1016/j.cub.2025.08.063
