স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে চিকিৎসকের পরিবর্তে রোগীর আবেগ বুঝতে এগিয়ে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (কৃ বু)। সাম্প্রতিক এক বিস্তৃত মেটা-অ্যানালিসিস সেই সম্ভাবনাকেই জোরালো করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, রোগীরা টেক্সট-ভিত্তিক চিকিৎসা পরামর্শে মানব চিকিৎসকের তুলনায় এআই, বিশেষ করে চ্যাট জিপিটি-এর মতো বড় ভাষা মডেলকে অনেক বেশি সহানুভূতিশীল ও যত্নশীল বলে মনে করছেন। ইউনিভার্সিটি অফ নটিংহ্যাম ও লেস্টারের গবেষকদের সমন্বয়ে পরিচালিত এই বিশ্লেষণে ১৫টি আলাদা সমীক্ষা অন্তর্ভুক্ত হয়। মোট ২,১৬৪ জন রোগীর , চ্যাট ভিত্তিক কথোপকথন পর্যবেক্ষণের পর দেখা যাচ্ছে, সহানুভূতি পরিমাপের স্কেলে চিকিৎসকদের তুলনায় কৃ বু, গড়ে দুই নম্বর এগিয়ে রয়েছে। প্রায় ৭৩% ক্ষেত্রে রোগীরা অনুভব করেছেন যে মানুষের চেয়ে বেশি সহানুভূতিশীল এই কৃ বু। ক্যান্সার পরিচর্যা, থাইরয়েড নির্ণয়, মানসিক স্বাস্থ্য, অটিজম-সহ অনেক চিকিৎসাক্ষেত্রে মানব ডাক্তারদের তুলনায় বেশি “সম্পৃক্ত ও মমতাময়” ভাবে যোগাযোগ করে কৃ বু। মানসিক স্বাস্থ্যে, এ আই-এর সহানুভূতির স্কোর উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তারপর ক্যান্সার ও থাইরয়েড সংক্রান্ত প্রশ্ন। দুই ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের তুলনায় উচ্চ রেটিং। অভিযোগ বা ব্যথা বর্ণনার ক্ষেত্রে রোগীরা এ আই-এর উত্তরকে অনেক বেশী মানবিক ও তাদের উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এগিয়ে রাখছেন। তবে চর্মরোগ সংক্রান্ত প্রশ্ন এর ব্যতিক্রম। এক্ষেত্রে দুটি সমীক্ষায় মানব চিকিৎসকরা কিছুটা এগিয়ে আছেন। গবেষকদের মতে, এ আই এমন ভাষা ব্যবহার করে যা রোগীর অনুভূতি যাচাই করে, তাদের উদ্বেগ স্বীকার করে এবং পরবর্তী করণীয় স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে। অন্যদিকে, ব্যস্ততা, সময়সীমা, প্রশাসনিক চাপ ও ক্লান্তি মানব চিকিৎসকদের উত্তরকে অনেক সময় সংক্ষিপ্ত ও শুষ্ক করে তোলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রশিক্ষণ তথ্যের হাজার হাজার মানবিক কথোপকথনের ধরন অনুসরণ করে। যেমন- মানবিক ভাষা, রোগীর উদ্বেগের শব্দ পুনর্গঠন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যাচাই করা বাক্য, চিকিৎসাপদ্ধতির স্পষ্ট ব্যাখ্যা ইত্যাদি। ঠিক এই জায়গাতেই রোগীরা নিজেদের বেশি ‘ কাছের মানুষ ‘ হিসাবে ভাবছেন যন্ত্রমানবদের। যুক্তরাজ্যে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সাধারণ চিকিৎসক, রোগীদের ই-মেইল-উত্তর তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিচ্ছেন। মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় কিছু এ আই চ্যাটবট তো রোগী-আলোচনার লক্ষাধিক সেশনও সম্পন্ন করছে। তবে সকলের মনে রাখা উচিত, সহানুভূতি দেখানো আর সঠিক চিকিৎসা সিদ্ধান্ত দেওয়া, এক নয়। ভুল তথ্য দিলে সহানুভূতি মিললেও রোগীর ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই চিকিৎসার আসল লক্ষ্য মাথায় রেখে ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যসেবা অনেক বেশী মানবিক ও সংবেদনশীল হবে আশা রাখা যায়।
সূত্রঃ AI chatbots versus human healthcare professionals: a systematic review and meta-analysis of empathy in patient care Open Access by Alastair Howcroft, et.el; British Medical Bulletin, 20th Oct/ 2025.
