দক্ষিণ চীনের গুয়াংডং প্রদেশ। ঘন বর্ষা ও গ্রানাইট পাহাড়ের ভাঁজের মধ্যে লুকিয়ে ছিল এক ভূতাত্ত্বিক বিস্ময়। স্থানীয়ভাবে অদ্ভুত বৃত্তাকার উপত্যকা হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, এটি কোনো সাধারণ ক্ষয় নয়, বরং পৃথিবীতে আছড়ে পড়া এক বিশাল মহাজাগতিক শিলাখণ্ডের দাগ। জিনলিন উল্কা গহ্বর। তাদের দাবি, প্রায় ৯০০ মিটার ব্যাসের গর্তটি পৃথিবীর হোলোসিন যুগের। অর্থাৎ শেষ ১১,৭০০ বছরে গঠিত সবচেয়ে বড় উল্কাপিণ্ড-ধাক্কা। তুলনার জন্য বলা যায়, রাশিয়ার বিখ্যাত মাচা উল্কাপিণ্ডের ব্যাস মাত্র প্রায় ৩০০ মিটার। আকারে জিনলিন, মাচাকে প্রায় তিনগুণ ছাড়িয়ে গেছে। গুয়াংডং অঞ্চলটি ভূপৃষ্ঠ-ধস, জলধারা ও ধারাবাহিক বৃষ্টির জন্য পরিচিত। সাধারণভাবে এ ধরনের উল্কাপিণ্ডজনিত গহ্বর বহু বছরের ক্ষয়ে মুছে যাওয়ার কথা। কিন্তু জিনলিনের ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটেছে। ক্রেটারের চারদিকে পাওয়া গেছে শিলার গায়ে জমে থাকা শক্ত খোলস। এটি গ্রানাইট-ভিত্তিক এক শক্ত আবরণ, যা প্রাকৃতিক ক্ষয় থেকে গর্তটিকে দীর্ঘসময় ধরে রক্ষা করেছে। এমন অক্ষত কাঠামো বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে। তারা বলছেন, “পৃথিবীতে সাম্প্রতিক অতীতেও বড় উল্কাপিণ্ড ধাক্কা পড়েছে , কিন্তু আমরা সেগুলোর বেশিরভাগেরই রেকর্ড হারিয়ে ফেলেছি”। জিনলিন অঞ্চলের শিলা বিশ্লেষণে গবেষকরা পেয়েছেন প্লেনার ডিফরমেশন ফিচার (PDFs) – অতি ক্ষুদ্র রেখা-আকৃতির গঠন, যা তৈরি হয় শুধু অত্যন্ত উচ্চচাপের ধাক্কায়। সাধারণ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বা ভূগর্ভীয় উত্তাপ এমন গঠন তৈরি করতে পারে না। এতেই স্পষ্ট, এর উৎস ছিল এক মহাজাগতিক ধাক্কা। তবে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি, সেই বস্তুটি ছিল লৌহজাতীয় উল্কা নাকি শিলাজাতীয় গ্রহাণু। ভবিষ্যৎ গবেষণার একটি কেন্দ্রীয় অংশ হয়ে উঠতে চলেছে এই বস্তুর প্রকার নির্ধারণ। জিনলিন- এর আবিষ্কার পৃথিবীর উল্কাপাত-ইতিহাস নিয়ে পুরনো ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। বহু বিজ্ঞানী এতদিন ধরে মনে করতেন, হোলোসিন যুগে বড় আকারের উল্কাপিণ্ড আঘাতের ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। সেই অনুমান হয়তো এবার সংশোধন করার প্রয়োজন । যদি মহাজাগতিক বস্তু পৃথিবীতে এর চেয়ে বেশি নিয়মিত আঘাত হানে, তবে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য গ্রহাণু সংঘর্ষ সংক্রান্ত ঝুঁকি-মডেলও নতুনভাবে দেখা প্রয়োজন হতে পারে। দলের এক ভূতাত্ত্বিক মন্তব্য করেন, “এই গর্তের উপস্থিতি বলছে, আমরা হয়তো পৃথিবীর সাম্প্রতিক ইতিহাসের একটি বড় অধ্যায় ভুলভাবে লিখে ফেলেছি”। মানবসভ্যতা, প্রযুক্তিতে উন্নত হলেও মহাজাগতিক আঘাতের বিরুদ্ধে এখনও আমাদের সেই প্রযুক্তি ভঙ্গুর। তাই এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের প্রয়োজন আছে – সহায়ক হতে পারে জিনলিন।
সূত্র : Jinlin crater, Guangdong Province, China: Impact origin confirmed by Ming Chen; et.el; matter and radiation at extreme; 15th Oct, 2025.
