পোল্যান্ডে বর্জ্য-পাহাড় এখন তৃণভূমি 

পোল্যান্ডে বর্জ্য-পাহাড় এখন তৃণভূমি 

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ নভেম্বর, ২০২৫

পোল্যান্ডের রিবনিক শহরের বাইরে বহু বছর ধরে পড়ে ছিল কয়লা-বর্জ্যের ধুসর ঢিবি। আঞ্চলিকভাবে ‘জঞ্জাল তাগাড় ’ নামে পরিচিত। ধূসর এই চিবিতে হঠাৎই রঙ ধরেছে। পাথরভরা অনুর্বর ঢিবিতে খনিজ-জৈব মিশ্রণ ছড়িয়ে বীজ বপনের পর মাত্র এক মরশুমেই এলাকা রূপ নিয়েছে সবুজ চারণভূমিতে। প্রায় ১,০০০ বর্গমিটারের এই পরীক্ষাটি পরিচালনা করছে পোল্যান্ডের সেন্ট্রাল মাইনিং ইনস্টিটিউট ও পোলিশ মাইনিং গ্রুপ। প্রকল্পের নেতৃত্বে আছেন উদ্ভিদ পুনরুদ্ধার ও জলমান বিশেষজ্ঞ জুকাশ পিয়েরঝালা।

কয়লা-বর্জ্যকে তারা রূপ দিয়েছেন ‘টেকনোসোল’-এ। এ হল মানুষের বানানো একধরনের মাটি, যাতে বর্জ্য উপাদান মিশিয়ে গাছের বৃদ্ধির উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হয়। পূর্ববর্তী গবেষণায় তৈরি জৈব-মিশ্রণ এবার বাস্তবে পরীক্ষা করা হয়েছে “গ্রিন অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্ট মাইন” প্রকল্পের অংশ হিসেবে। ২০২৫ সালের এপ্রিল–মে মাসে, স্থানীয় জলবায়ুর জন্য তৈরি বিশেষ বীজ ছড়ানো হয়। গ্রীষ্ম শেষে দেখা যায়, কোনো সেচ ছাড়াই এলাকা ভরে গেছে ফুল, ঘাস ও ভেষজে। ইতিমধ্যে সেখানে মৌমাছি ও অন্যান্য পরাগবাহীরাও আসতে শুরু করেছে।

এই মিশ্রণ প্রয়োগে আলাদা করে উর্বর মাটি আনার প্রয়োজন পড়ে না। কম রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন, এমন খরা-সহনশীল গাছ বেছে নেওয়ায় ঝোপঝাড়ের বিস্তারও নিয়ন্ত্রণে থাকে। আপার সিলেসিয়ান কয়লা অঞ্চলে প্রায় ৯,৮৮০ একর বর্জ্যস্তূপ রয়েছে, যা বহু ছোট শহরের চেয়ে আয়তনে বড়। তাতেও এমনটা করাই যায়। গবেষণা বলছে, জৈব-মিশ্রিত কৃত্রিম মাটি অম্লাক্ত বর্জ্যকে স্থিতিশীল করে, ধুলো কমায়, ক্ষয় রোধ করে এবং গরমে কালো পাথর-পাহাড়ের তাপমাত্রা কম রাখে। ক্রমে মাটির নীচের জীবজগৎও ফিরে আসে।

এই মিশ্রণের একটি মূল উপাদান হলো ‘স্টেবিলাইজড স্যুয়ারেজ স্লাজ’। অর্থাৎ বর্জ্য-পরিশোধন কেন্দ্রের নিরাপদ জৈব উপাদান, যাতে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে। তবে প্রতিটি উৎসের উপাদান আলাদাভাবে পরীক্ষা করা জরুরি। খনি-বর্জ্যের কোথাও অম্লতা আবার কোথাও লবণাক্ততা বেশি। তাই মিশ্রণের পরিমাণ নির্ণয় ও ক্ষেত্রপর্যায়ের নজরদারি অপরিহার্য। পাশাপাশি সঠিক বীজের মিশ্রণ নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে অনুপ্রবেশকারী প্রজাতি দমন করা যায়।

এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, বাইরে থেকে ব্যয়বহুল টপসয়েল এনে বিছানোর প্রয়োজন পড়ে না। বরং সামান্য মিশ্রণ ব্যবহার করে ওই ক্ষেত্রেই তৈরি হয় এক জীবন্ত স্তর, যা সময়ের সঙ্গে নিজেই পুষ্টি ঘুরিয়ে নেয়। বিভিন্ন শহর ও সংস্থা এখন যাচাই করছে কোন পুনরুদ্ধার-পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর ও খরচ-সাশ্রয়ী হবে। ক্ষেত্রপর্যায়ের সব তথ্য ওপেন ডেটা হিসেবে প্রকাশ করা হবে, যাতে বোঝা যায়, তীব্র গরম, বৃষ্টি বা খরায় কোন বীজের মিশ্রণ সবচেয়ে ভালো টিকে থাকবে।

 

সূত্র : Minimising Coal Mining’s Impact on Biodiversity: Artificial Soils for Post-Mining Land Reclamation; The journal Sustainability.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + 20 =