নতুন এক গবেষণা বলছে, উত্তর আমেরিকার পরিচিত অভিবাসী পাখিদের অস্তিত্ব পাঁচটি বৃহৎ অরণ্যের সাথে জড়িত। এদের ‘ফাইভ গ্রেট ফরেস্ট্স’ বলা হয়। ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি এবং কর্নেল ল্যাব অব অর্নিথোলজির গবেষকরা, ‘ই-বার্ড’ প্ল্যাটফর্মের কোটি খানেক পাখি পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের সপ্তাহভিত্তিক গতিবিধি খতিয়ে দেখে তাঁরা জেনেছেন, ৪০টি অভিবাসী প্রজাতির পাখির বিশ্বজোড়া জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক দক্ষিণ মেক্সিকো থেকে উত্তর কলম্বিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এই বনাঞ্চলগুলিতেই দীর্ঘ সময় কাটায়। অর্থাৎ, এরা শুধু ক্ষণিকের বিশ্রাম নয়, পুরো বছর জুড়েই জীবনচক্রের একটা বড় অংশ কাটিয়ে দেয় এই উষ্ণ অরণ্যে। যে সকল পরিচিত পাখিকে বসন্তে উত্তর আমেরিকায় দেখা যায় তাদের মধ্যে রয়েছে কেন্টাকি ওয়ার্বলার, উড থ্রাশ, গোল্ডেন-উইংড ওয়ার্বলার, সেরুলিয়ান ওয়ার্বলার। এরা অনেকেই বিশাল সংখ্যায় জমায়েত হয় মধ্য আমেরিকার এই পাঁচ অরণ্যে। সেরুলিয়ান ওয়ার্বলারের প্রায় ৪০ শতাংশের বসন্ত ঋতু, এই অঞ্চলের উপর নির্ভরশীল। গবেষণায় দুটি অরণ্য অঞ্চল বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে – সেলভা মায়া ও মস্কিতিয়া। কিন্তু বিশাল জীববৈচিত্র্যের এই এলাকাটি গত ১৫–২০ বছরে দ্রুত ক্ষয়ে গেছে। দু’জায়গার প্রায় এক-চতুর্থাংশ বনভূমি বিলীন হয়ে গেছে। মস্কিতিয়ার পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। দুই দশকে, অবৈধ গবাদি পশুপালন ও বনচ্ছেদনের জন্য প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অরণ্য হারিয়ে গেছে।
আয়তনে এই অরণ্যভূমি ভার্জিনিয়া প্রদেশের সমান। জাগুয়ার এখানে অবাধে চলাফেরা করে, স্কারলেট ম্যাকাও বাসা বাঁধে, টাপির নদী-জঙ্গলে ঘোরে। আর অভিবাসী পাখিরা উত্তর-দক্ষিণের দীর্ঘ যাত্রায় এখানে এসে তাদের শক্তি সঞ্চয় করে। প্রতি শরতে কোটিখানেক পাখি দক্ষিণে নামে। তখন এই পাঁচ জায়গায় ওয়ার্বলার, ফ্লাইক্যাচার, ভিরিওদের যে ভিড় তৈরি হয় তা বিজ্ঞানীদেরও বিস্মিত করে। গবেষকদের মতে, যদি মধ্য আমেরিকার শেষ বৃহৎ অরণ্যগুলিও নষ্ট হয়ে যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বসন্তের পরিচিত পাখির আগমনও ক্ষীণ হয়ে যাবে। কারণ নিউ ইংল্যান্ড, অ্যাপালাচিয়া, গ্রেট লেকস, মিসিসিপি ডেল্টা, এই সব উত্তরাঞ্চলের বনাঞ্চল আসলে মধ্য আমেরিকার অরণ্যেরই ভগিনী ভূখণ্ড। গ্রীষ্মে যেসব পাখি উত্তর আমেরিকায় আসে, বছরশেষে তাদের অনেককে দেখা যায় সেলভামায়া কিংবা মস্কিতিয়ার ছায়াঘন অরণ্যে বিশ্রাম নিতে। স্কারলেট ট্যানাজার, ব্রড-উইংড হক, গোল্ডেন-উইংড ওয়ার্বলার এরা সবাই এই অরণ্যে শীতঘুম কাটিয়ে আবার উত্তরমুখী হয়। ফলে দক্ষিণের অরণ্য রক্ষাই, উত্তর আমেরিকার বসন্তকে সুরক্ষার শর্ত হতে পারে। স্থানীয় ও আদিবাসী সম্প্রদায়গুলিকে কাজে লাগিয়ে বন পুনরুদ্ধার, অগ্নি নিয়ন্ত্রণ এবং কাকাও, অলস্পাইসের মতো পরিবেশবান্ধব কৃষিকাজের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্গঠন করার কাজ চলছে। এ কাজ অভিবাসী পাখিদের জন্য নিরাপদ পথ ও বিশ্রামস্থল তৈরি করবে। গবেষক আনা লেলো স্মিথের ভাষায়, “মধ্য আমেরিকার প্রতিটি হেক্টর বন রক্ষা মানে পুরো মহাদেশের পাখি ও মানুষের ভবিষ্যৎ রক্ষা।” বসন্তের সেই চেনা সুর ও রঙ বাঁচিয়ে রাখতে হলে ‘ফাইভ গ্রেট ফরেস্ট্স’ অর্থাৎ এই বৃহৎ পঞ্চারণ্যকে বাঁচিয়ে রাখা খুব জরুরী।
সূত্র: Leveraging participatory science data to guide cross-border conservation of migratory birds: A case study from Mesoamerica’s Five Great Forests by Anna Lello-Smith ; Science Direct ;19 November 2025.
