উপগ্রহ-ট্যাগ লাগানো তিনটি অ্যামুর ফ্যালকন মনিপুরের আকাশ ছেড়ে সুদূর আফ্রিকার সোমালিয়া পর্যন্ত প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক রোমাঞ্চকর পরিযান সম্পন্ন করেছে। এ ঘটনা বিস্ময় জাগিয়েছে গবেষক ও পাখিপ্রেমীদের মধ্যে। ভারতের ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট পরিচালিত ‘মণিপুর আমুর ফ্যালকন ট্র্যাকিং প্রোজেক্ট’ -এর আওতায় ২০২৫ সালের ১১ নভেম্বর মনিপুরের সবুজ বনাঞ্চলে তিনটি ফ্যালকন—কে চিহ্নিত ও ট্যাগ করা হয়—আপাপাঙ (প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ), আলাং (তরুণী মেয়ে) এবং আহু (প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে)। এরপর থেকেই তাদের প্রতিটি গতি ও উড়ানপথ অত্যাধুনিক উপগ্রহভিত্তিক প্রযুক্তিতে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল।
এই তিন পাখির মধ্যে প্রথমে নজির গড়ে আপাপাঙ। মাত্র ১৫০ গ্রাম ওজনের এই ক্ষুদে শিকারী পাখিটি প্রায় ৩,১০০ কিলোমিটার পথ একটানা উড়ে পাড়ি দিয়েছে। থামেনি এক মুহূর্তও। ভারতের কেন্দ্র থেকে আরব সাগর অতিক্রম করে প্রায় ৭৬ ঘণ্টা ধরে চলা এই ভয়াবহ ক্লান্তিকর যাত্রা শেষ করে সে নিরাপদে পৌঁছেছে সোমালিয়ায়। এই নিরবচ্ছিন্ন উড়ান পৃথিবীর যে কোনো পরিযায়ী পাখির জন্যই এক বিস্ময়কর কৃতিত্ব। তার কিছুক্ষণ পরেই আলাংও নিরাপদে সোমালিয়ায় পৌঁছে যায়। এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ হল এই বিরল মহাদেশ-অতিক্রমী সফল পরিযানের আরেকটি অধ্যায়। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী তৃতীয় ফ্যালকন আহু-ও গন্তব্যের দরজায় দাঁড়িয়ে, অর্থাৎ যে কোনো মুহূর্তেই তার সোমালিয়া স্পর্শ করা সময়ের অপেক্ষা মাত্র বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
তামিলনাড়ুর পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও বন দফতরের অতিরিক্ত প্রধান সচিব সুপ্রিয়া সাহু সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ এই সাফল্যের কথা শেয়ার করেছেন। তিনি লিখেছেন—“তিনটি অ্যামুর, এক রুদ্ধশ্বাস পরিযান, আর বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকা লাখো মানুষ।” তাঁর এই মন্তব্য থেকেই বোঝা যায় বিশ্বজুড়ে কতটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে এই উদ্যোগকে ঘিরে।
অ্যামুর ফ্যালকন পৃথিবীর অন্যতম দুর্লভ পরিযায়ী শিকারী পাখি। দীর্ঘ অবিরাম যাত্রার জন্যই এরা পরিচিত। এরা বছরভর হাজার হাজার কিলোমিটার সমুদ্রপথ অতিক্রম করে। মনিপুর ও নাগাল্যান্ডে থামার সময় তারা ঝাঁকে ঝাঁকে জন্মানো উইপোকা খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করে। ক্ষুদ্র শরীরে জমা এই শক্তিই তাদের আকাশপথে উড়ানের জ্বালানি।
তবে আগে এদের জীবন এত নিরাপদ ছিল না । একসময় উত্তর-পূর্ব ভারতের অনেক অঞ্চলে এই পাখিকে নির্বিচারে শিকার করা হতো। কিন্তু গত দশকে পরিস্থিতি বদলে গেছে একেবারে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সক্রিয় সহযোগিতা, সচেতনতা কর্মসূচি ও সম্প্রদায়ভিত্তিক সংরক্ষণ উদ্যোগের ফলে আজ মনিপুর হয়ে উঠেছে অ্যামুর ফ্যালকনের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এই পরিবর্তন শুধু ভারতের পক্ষেই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে পাখি সংরক্ষণের জন্য একটি অনুকরণীয় উদাহরণ।
এই বছরের পরিযান যাত্রা তাই শুধু বিজ্ঞানী বা পক্ষীবিদদের সাফল্য নয়—এটি প্রকৃতি সংরক্ষণে মানুষের সদিচ্ছা, সহযোগিতা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সূত্র : Two 150-gm Amur falcons Apapang and Alang fly 5,000 km from Manipur to Africa, leaving scientists stunned by By
Trending Desk, Nov 20, 2025, 08:34:00 PM IST.
