সিংহগর্জনের মাধ্যমিক পর্যায়

সিংহগর্জনের মাধ্যমিক পর্যায়

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

আফ্রিকার সিংহর গর্জন এক ধরনের নয়, দুধরনের। এই নতুন তথ্য ভবিষ্যতের বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ ও সংরক্ষণ কার্যক্রমে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন এক ‘মাঝারি পর্যায়ের গর্জন’ চিহ্নিত করেছেন, যা আগে জানা ছিল না। এতদিন মনে করা হতো, সিংহ শুধু এক ধরনের পরিচিত শক্তিশালী গর্জনই করে। পুরো গলা খুলে দেওয়া গভীর পূর্ণ-গর্জন। কিন্তু গবেষকদের এই নতুন পর্যবেক্ষণ জানাচ্ছে, গর্জনের ধারাবাহিকতায় দুটি ধরণ থাকে। পরিচিত পূর্ণ-গর্জন এবং এই নতুন মধ্যবর্তী গর্জন। প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (কৃ বু) ব্যবহার করে সিংহের বিভিন্ন ধরনের শব্দকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলাদা করা গেছে। এ আই–নির্ভর এই ব্যবস্থার নির্ভুলতা ৯৫.৪%। এটি মানুষের ব্যাখ্যা–নির্ভর ভুল বা পক্ষপাতকে অনেকটাই কমিয়ে ফেলতে পারে। ফলে কোন সিংহ কোন শব্দ করছে, তা শনাক্ত করা আরও নির্ভরযোগ্য ও নিখুঁত হচ্ছে। প্রধান গবেষক জনাথন গ্রোকট বলেন, “সিংহের গর্জন শুধু প্রতীকী নয়, আলাদা আলাদা স্বাক্ষরের মতন। এগুলি থেকে সিংহের সংখ্যা অনুমান করা যায়, এমনকি নির্দিষ্ট কোনো সিংহকে শনাক্ত করাও সম্ভব। এতদিন এসব চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের বিচারভিত্তিক মতামতের উপর নির্ভর করতে হত। এআই–ভিত্তিক নতুন পদ্ধতি আরও নির্ভরযোগ্য এবং পক্ষপাতহীন তথ্য দেবে, যা ক্রম হ্রাসমান সিংহ-সংখ্যা বাঁচাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিপদের তালিকা বর্তমানে সিংহকে ‘বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সারা আফ্রিকা জুড়ে এখন মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার সিংহ অবশিষ্ট আছে, যা গত ২৫ বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্যদিকে বড় মাংসাশী প্রাণীদের নিয়ে অন্যান্য গবেষণায়ও অগ্রগতি দেখা গেছে। যেমন, দাগযুক্ত হায়েনা নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে বোঝা গেছে, বন্যপ্রাণীর শব্দ বিশ্লেষণ বা জৈব-শব্দতত্ত্ব (বায়োঅ্যাকৌস্টিক্স) এখন পরিবেশবিজ্ঞানে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। গবেষক দল উন্নত যন্ত্র-শিক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে পূর্ণ-গর্জনের ধরনগুলো বিশ্লেষণ করেছে। এতে পৃথক সিংহকে আলাদা করে চেনার সক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়েছে। এই স্বয়ংক্রিয়, তথ্য–নির্ভর পদ্ধতি নিষ্ক্রিয় শব্দ-সন্ধানকে (প্যাসিভ অ্যাকৌস্টিক মনিটরিং) আরও সহজ করেছে। পায়ের ছাপ দেখে অনুসন্ধান করা বা ক্যামেরা–ফাঁদ বসানোর মতো প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এ পদ্ধতি দ্রুত, সুলভ এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প হতে পারে। জনাথন গ্রোকট আরও বলেন, “আমাদের ধারণা, বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণে এখন বড় ধরনের পরিবর্তন আনা জরুরি। নিষ্ক্রিয় শব্দ–পর্যবেক্ষণকে বড় পরিসরে ব্যবহার করতে হবে। জৈব-শব্দতত্ত্ব আরও উন্নত হলে তা সিংহসহ বিপন্ন প্রাণীদের কার্যকর সংরক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।”

 

সূত্র : “Roar Data: Redefining a Lion’s Roar Using Machine Learning” by Jonathan Growcott, Alex Lobora, Andrew Markham, Charlotte E. Searle, Johan Wahlström, Matthew Wijers and Benno I. Simmons, 20 November 2025, Ecology and Evolution.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven + thirteen =