হলুদ আদা-পরিবারের উদ্ভিদ, যা মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উষ্ণ অঞ্চলে জন্মায়। কারকুমা গণের প্রায় ৭০টি প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে ভারতে পাওয়া যায় প্রায় ৪০টি। রান্নায় ব্যবহৃত হলুদ হল, কারকুমা লঙ্গা। আর কারকুমা অ্যারোমাটিকা ব্যবহৃত হয় প্রসাধনীতে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কারকুমা লঙ্গা-তেই ফাঙ্গাস বিরোধী ও জীবাণু বিরোধী ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি। হলুদের ব্যবহারের ইতিহাস চার হাজার বছরের পুরোনো। বৈদিক যুগে এটি মশলা ও রং হিসেবে ব্যবহৃত হতো, পরে আয়ুর্বেদে ওষুধ হিসেবে গুরুত্ব পায়। বর্তমানে বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৮০% আসে ভারত থেকে, যেখানে শীর্ষ উৎপাদক তেলেঙ্গানা ও মহারাষ্ট্র ।
হলুদ উদ্ভিদে বড় চওড়া পাতা ও ভূগর্ভস্থ রাইজোম থাকে। কারকুমা লঙ্গা একটি ট্রিপ্লয়েড প্রজাতি। এর বীজে প্রজনন সম্ভব নয়। রাইজোম থেকেই চারা তৈরি হয়। ফসলের বৃদ্ধি চক্র ৯–১০ মাস। যৌন প্রজনন সীমিত হওয়ায় হলুদের জাত উন্নয়ন করা বেশ কঠিন। তবে মিউটেশন ও আধুনিক বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে লবণ-সহনশীল ও রোগ-সহনশীল জাত তৈরি করা গেছে। এখানে জিনোটাইপ-পরিবেশ আন্ত ক্রিয়ার ভূমিকা প্রধান। একই জাত ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখাতে পারে। এই কারণে আণবিক প্রজনন দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। মার্কার-সহায়িত নির্বাচন (MAS), জেনেটিক ট্রান্সফরমেশন ইত্যাদি প্রযুক্তি ফলন, মান ও রোগ প্রতিরোধ নির্ণয়ে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক দ্রুত ও নির্ভুল। জিনগত বৈচিত্র্য শনাক্তকরনে RAPD, ISSR এবং SCoT, এই তিন ধরনের ডিএনএ মার্কার বেশ কার্যকর। বিশেষত SCoT জিন-সমৃদ্ধ অঞ্চলে কাজ করায় উচ্চ বহুরূপতা দেয়।
কারকুমা লঙ্গার ১৪টি জাত নিয়ে RAPD, ISSR ও SCoT, মোট ৩৬টি প্রাইমার ব্যবহার করে সাম্প্রতিক গবেষণা শ্রেণিবিন্যাস, জাত নির্বাচন, জার্ম প্লাজম সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজনন কৌশলের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে। এই ধরনের জেনেটিক বিশ্লেষণ ভবিষ্যতে আরও উন্নত, উচ্চ ফলনশীল এবং রোগ-সহনশীল হলুদ জাত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সূত্র: Molecular insights into the genetic diversity of Curcuma longa L.:a “A comparative study with RAPD, ISSR and scot markers” 01 December 2025
