ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বি আই এস) প্রকাশিত আর্থকোয়েক ডিজাইন কোড ২০২৫–এর নতুন ভূ-কম্প মানচিত্রে স্পষ্ট হয়েছে যে ভারতের বিশাল ৬১% অংশ এখন মাঝারি থেকে উচ্চ ভূমিকম্পপ্রবণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষত পুরো হিমালয় অধ্যুষ্যিত অঞ্চল, অর্থাৎ জম্মু–কাশ্মীর, লাদাখ, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশকে এবার রাখা হয়েছে নতুন তৈরি জোন ৬–এ, যা দেশের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ভূ-কম্পপ্রবণ অঞ্চল।
জোন ৬ হল এক বিশেষ শ্রেণি, যা ‘অতি-উচ্চ’ ভূকম্প ঝুঁকি নির্দেশ করে। এটি তৈরি হয়েছে সম্ভাব্য ভূ-কম্প ঝুঁকি মূল্যায়ন (পি এস এইচ এ) পদ্ধতির ভিত্তিতে, যেখানে শুধু কম্পনের সম্ভাবনা নয়, কম্পনের তীব্রতাও বৈজ্ঞানিকভাবে হিসাব করা হয়।
আগের মানচিত্রে হিমালয়ের বিভিন্ন অংশ জোন ৪ ও ৫–এ বিভক্ত ছিল, যদিও পুরো অঞ্চলই ভারত-ইউরেশিয়া পাতের সংঘর্ষস্থলে অবস্থিত। বহু জায়গায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় বড় ভূমিকম্প হয়নি। এটা সেখানে বিপুল চাপ সংরক্ষণের ইঙ্গিত দেয়। পূর্বের মানচিত্র এই বাস্তবতাকে যথাযথভাবে ধরতে পারেনি। তাই নতুন মানচিত্রকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, “দীর্ঘদিনের অসম্পূর্ণতা সংশোধনের পথে এক বড় পদক্ষেপ।“ এই নতুন জোন ৬ মানচিত্র হিমালয়ের ভূতাত্ত্বিক বাস্তবতা আরও নির্ভুলভাবে তুলে ধরেছে।
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এই শ্রেণিতে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ থেকে প্রমাণ হয়, দেশের দুই প্রান্তই অতি-সক্রিয় ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের ওপর দাঁড়িয়ে। নতুন মানচিত্র দেখাচ্ছে, ভারতের ৭৫% জনসংখ্যা এখন সেই সক্রিয় ভুমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের বাসিন্দা।
আগে প্রায় ৫৯% এলাকা ভূমিকম্পপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত ছিল; এখন ৬১% এলাকা মাঝারি থেকে উচ্চ ঝুঁকির আওতায় এসেছে। অনেক সীমান্তবর্তী শহর ও জেলা আগে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকির শ্রেণিতে ছিল, এবার সেগুলিও উচ্চ ঝুঁকির পর্যায়ে উঠে এসেছে।
নতুন বি আই এস নির্দেশিকা তাই প্রথমবার শুধু বাড়ি-ঘরের কাঠামো নয়, অকাঠামোগত উপাদান —যেমন প্যারাপেট, জলের ট্যাংক, বৈদ্যুতিক লাইন, লিফট প্রভৃতি—এসব অংশকে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তাবিধির আওতায় এনেছে। ভূমিকম্পে এ ধরনের অংশ ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
যে সব ভারী অংশ বাড়ির মোট ওজনের ১%–এর বেশি, সেগুলো বাধ্যতামূলকভাবে ভিত্তিবদ্ধ করতে হবে।
নতুন মানচিত্রের সবচেয়ে বড় সংযোজন হল ‘এক্সপোজার উইন্ডো’ , অর্থাৎ ঝুঁকি বা ক্ষতিকর উপাদানের সংস্পর্শে থাকার নির্দিষ্ট সময়কাল, যা এখন শুধু মাটির কম্পন নয়, এলাকার জনসংখ্যা, অবকাঠামো ও সামাজিক–অর্থনৈতিক দুর্বলতাকেও বিবেচনার মধ্যে আনছে। অর্থাৎ কোথাও সামান্য কম্পন হলেও, জনঘনত্ব বেশি থাকলে ঝুঁকি সেখানে বাড়তি ধরা হবে।
নতুন ভূ-কম্পন মানচিত্র দেখাচ্ছে—হিমালয়সহ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ভূ-অভ্যন্তরীণ চাপের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তাই এখন দেশকে জোর দিতে হবে—বৈজ্ঞানিক নির্মাণকাঠামো, শক্তিশালী সতর্কীকরণ ব্যবস্থা এবং দূরদর্শী দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনায়।
ভূমিকম্প আটকানো যাবে না—কিন্তু পূর্ব-প্রস্তুতি বাড়ালে ক্ষতি কমানো অবশ্যই সম্ভব।
সূত্র : 61% of the country now at moderate to high risk — decoding India’s new seismic map by Asavari Singh, published on 02 December, 2025 04:55 pm IST.
