ট্রান্সিলভানিয়ায় ডাইনোসরের জীবাশ্ম স্তূপ 

ট্রান্সিলভানিয়ায় ডাইনোসরের জীবাশ্ম স্তূপ 

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

রোমানিয়ার ট্রান্সিলভানিয়ার হেটেগ অববাহিকা দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ডাইনোসর জীবাশ্ম অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। গত একশ বছরে এখানে বহু বিচ্ছিন্ন ডাইনোসর হাড় পাওয়া গেলেও, সম্পূর্ণ বা আংশিক কঙ্কাল আবিষ্কার ছিল তুলনামূলকভাবে বিরল। কিন্তু সাম্প্রতিক এক সাড়া জাগানো গবেষণা সেই ধারণা বদলে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখানে এমন একটি জীবাশ্ম স্থান আবিষ্কার করেছেন, যেখানে ডাইনোসরের হাড় প্রায় একটির উপর আরেকটি স্তূপাকারে জমে রয়েছে—যা ইউরোপে নজিরবিহীন।

এই ব্যতিক্রমী স্থানটির নাম K2, যেখানে মাত্র পাঁচ বর্গমিটারেরও কম এলাকায় পাওয়া গেছে ৮০০-র বেশি মেরুদণ্ডী প্রাণীর জীবাশ্ম। প্রতি বর্গমিটারে শতাধিক জীবাশ্মের ঘনত্ব এটিকে হেটেগ অববাহিকার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জীবাশ্ম ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। হাঙ্গেরি ও রোমানিয়ার গবেষকদের নিয়ে গঠিত ভ্যালিওরা ডাইনোসর রিসার্চ গ্রুপ প্রায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে খননকাজ চালিয়ে এই অসাধারণ আবিষ্কারটি করেছেন। গবেষণার পূর্ণ বিবরণ সম্প্রতি পি এল ও এস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রায় ৭ কোটি ২০ লক্ষ বছর আগে, পরবর্তী ক্রিটেশিয়াস যুগে, এই অঞ্চলটি ছিল উষ্ণ ও উপক্রান্তীয় জলবায়ুর অধীন। পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে আসা অস্থায়ী নদীগুলি হঠাৎ প্রবল বর্ষণে ফুলেফেঁপে উঠত। সেই বন্যার তোড়ে ভেসে আসত মৃত প্রাণীর দেহ, হাড়গোড়, এমনকি জীবিত প্রাণীও। এরা এসে পড়ত একটি ছোট হ্রদে, যেখানে প্রবাহ হঠাৎ থেমে যাওয়ায় সবকিছু একত্রে জমা হতো। এভাবেই হ্রদের ধারে তৈরি হয়েছিল হাড় আটকে পড়ার প্রাকৃতিক ফাঁদ বা বলা যায় ডাইনোসরের কবরস্থান।

K2 ক্ষেত্র থেকে শুধু বিচ্ছিন্ন হাড়ই নয়, একাধিক আংশিক ডাইনোসর কঙ্কালও উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল ছোট আকারের উদ্ভিদভোজী র‍্যাবডোডোন্টিডি ডাইনোসর, যা আগে থেকেই এই অঞ্চলে পরিচিত। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি হলো—একটি টাইটানোসোর শ্রেণির দীর্ঘগ্রীব ডাইনোসরের সুসংরক্ষিত কঙ্কাল। ট্রান্সিলভানিয়ায় এই প্রথম এত ভালো অবস্থায় এমন ডাইনোসরের দেহাবশেষ পাওয়া গেল।

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, K2 এখন পর্যন্ত হেটেগ অববাহিকার সবচেয়ে প্রাচীন মেরুদণ্ডী জীবাশ্ম সঞ্চয়। গবেষকদের মতে, এই আবিষ্কার ইউরোপের শেষ ডাইনোসর যুগের বাস্তুতন্ত্র, বিবর্তনের ধারা এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের ইতিহাস উন্মোচনে এক নতুন আলো ফেলেছে।

 

সূত্র: Paleontological and paleoecological significance of the oldest highly productive Upper Cretaceous (lowermost Maastrichtian) bonebed of Haţeg Basin (western Romania; Densuş-Ciula Formation) by Gábor Botfalvai, Zoltán Csiki-Sava,et.al; published in PLOS One, 2025; 20 (11): e0335893

DOI: 10.1371/journal.pone.0335893.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 11 =