শুক্রাণুর জিনবিন্যাস ও ক্ষতিকর মিউটেশন

শুক্রাণুর জিনবিন্যাস ও ক্ষতিকর মিউটেশন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫

পুরুষদের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুক্রাণুতে ক্ষতিকর জিনগত মিউটেশন শুধু জমা হয় না, কিছু মিউটেশন সক্রিয়ভাবে “নির্বাচিত” হয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউট ও কিংস কলেজ লন্ডনের ‘ টুইন ইউ কে’ তে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, বাবার বয়স কীভাবে সন্তানের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যঝুঁকিকে প্রভাবিত করে। অত্যাধুনিক ‘ন্যানো সিক’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২৪ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ৮১ জন সুস্থ পুরুষের শুক্রাণু বিশ্লেষণ করা হয়। ফলাফল স্পষ্ট। তিরিশ বছর বয়সী পুরুষদের প্রায় ২ শতাংশের শুক্রাণুতে রোগসৃষ্টিকারী মিউটেশন পাওয়া যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই হার বেড়ে মধ্যবয়সে পৌঁছায় ৩–৫ শতাংশে। সত্তরের কাছাকাছি বয়সে প্রায় ৪.৫ শতাংশ শুক্রাণুতে ক্ষতিকর জিনগত পরিবর্তন ধরা পড়েছে। গবেষকদের মতে, এই প্রবণতা শুধু সময়ের সঙ্গে ডিএনএ ক্ষয়ের ফল নয়। বরং এক্ষেত্রে অণ্ডকোষের ভিতরে এক ধরনের নীরব প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ করে। যেখানে কিছু মিউটেশন শুক্রাণু উৎপাদক কোষকে বাড়তি সুবিধা দেয়। ফলে সেই পরিবর্তন বহনকারী কোষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, অন্য কোষকে ছাপিয়ে। গবেষণায় ৪০টি এমন জিন চিহ্নিত হয়েছে, যেগুলির নির্দিষ্ট মিউটেশন শুক্রাণু তৈরির সময় সুবিধা পায়। এর অনেকগুলিই শিশুদের গুরুতর স্নায়ু-বিকাশ জনিত রোগ এবং বংশগত ক্যানসারের ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত। আগে যেখানে এমন জিনের সংখ্যা খুব কম বলে মনে করা হত, নতুন তথ্য জানাচ্ছে সমস্যাটি অনেক বেশি বিস্তৃত। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, সব ক্ষতিকর মিউটেশন থেকেই যে সন্তান জন্মায়, তা নয়। অনেক ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন নিষেক ব্যাহত করতে পারে। ভ্রূণের বিকাশ থামিয়ে দিতে পারে বা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই শুক্রাণুতে মিউটেশন বাড়া মানেই সরাসরি সন্তানের অসুস্থতা নয়। তবে ঝুঁকি যে বাড়ে, তা স্পষ্ট। একই সঙ্গে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সরাসরি সন্তানদের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে একই ছবির প্রতিফলন পেয়েছেন। ৫৪ হাজারের বেশি পরিবার ও প্রায় ৮ লক্ষ মানুষের জিনগত তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ৩০টির বেশি জিনে এমন মিউটেশন রয়েছে যা শুক্রাণু কোষে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বেশি হারে দেখা যায়। এই কারণেই অনেক বিরল জিনগত রোগ বাবা-মায়ের শরীরে না থাকলেও সন্তানের মধ্যে হঠাৎ দেখা দেয়। গবেষকদের মতে, এই ফলাফল মানব প্রজনন ও বংশগত রোগ বোঝার ক্ষেত্রে জরুরী। বাবার বয়স, জীবনযাপন ও পরিবেশগত প্রভাব, সব মিলিয়ে কীভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জিনগত ঝুঁকি তৈরি হয়, তা বুঝতে এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে।

 

সূত্র: “Sperm sequencing reveals extensive positive selection in the male germline” by Matthew D. C. Neville, Andrew R. J. Lawson, et.al; 8 October 2025, Nature.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 2 =