বুদ্ধিমান ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সাপ

বুদ্ধিমান ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সাপ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫

দীর্ঘদিন ধরেই সাপকে ভাবা হয়েছে সে ঠান্ডা মাথার, নিছক সাড়া দানে সক্ষম এক “জৈব যন্ত্র” মাত্র। তার না আছে স্মৃতি, না আছে শেখার ক্ষমতা। কিন্তু গত দশকের গবেষণা সেই পুরনো ধারণাকে কার্যত বদলে দিয়েছে। আজ জীববিজ্ঞান বলছে, সাপ শিখতে পারে, মনে রাখতে পারে, পথ চিনতে পারে। এমনকি তার আচরণে ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক নমনীয়তাও ফুটে ওঠে। মূলত ভুল পরীক্ষার কারণেই, সাপের বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি এতদিন অবহেলিত ছিল। অধিকাংশ ল্যাব টেস্ট তৈরি হত স্তন্যপায়ী ও পাখির জন্য – গোলকধাঁধা, বোতাম টেপা ইত্যাদি। এগুলো সাপের স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে একেবারেই খাপ খায় না। কিন্তু যখন গবেষকেরা সাপের জীবনের সঙ্গে মানানসই পরীক্ষা চালালেন, তখনই বেরিয়ে এল আসল ছবি। এই গবেষণায়, সাপদের এমন একটি পরিবেশে রাখা হয়, যেখানে অনেক ভুয়ো পথের মধ্যে মাত্র একটি নিরাপদ আশ্রয় ছিল। দেখা গেল, চার দিনের মধ্যেই সাপগুলি দ্রুত সরাসরি সেই আশ্রয়ের দিকে যেতে শেখে। তারা কম পথ ঘোরে, নির্দিষ্ট দিকেই বেশি সময় কাটায়। স্পষ্টতই এটা নিছক প্রবৃত্তি নয়, এটা শেখা ও স্থানিক স্মৃতির প্রমাণ। এই স্মৃতি শুধু পরীক্ষাগারেই সীমাবদ্ধ নয়। ২০২৫-এর ফ্রনটিয়ারস ইন এথনোলজি জানাচ্ছে, সাপেরা খাবার, নিরাপত্তা বা বিপদ সম্পর্কিত জায়গা দীর্ঘদিন মনে রাখতে পারে। প্রকৃতিতে তাই তারা বারবার ফিরে যায় সফল শিকারক্ষেত্রে, পরিচিত আশ্রয়ে বা মৌসুমি গর্তে। পিট ভাইপাররা বছরের পর বছর একই শীতনিদ্রার গর্তে ফিরতে কয়েক কিলোমিটার পথও পাড়ি দেয়। মনে রাখতে হবে, এদের মাথায় কিন্তু স্তন্যপায়ীদের মতো হিপোক্যাম্পাস নেই। সাপের বুদ্ধি আবেগনির্ভর নয়, বরং সহযোগী ও প্রাসঙ্গিক স্মৃতির উপর নির্ভরশীল। তারা পরিবেশ ও অভিজ্ঞতাকে ফলাফলের সঙ্গে জুড়ে নিয়ে ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নেয়। তাই “ধাঁধা সমাধান করতে পারে না” বলে সাপকে বুদ্ধিহীন বলাটা আজ আর ধোপে টেকে না। শিকার ধরার সময় শরীর দিয়ে পথ আটকে দেওয়া, পরিবেশকে নিজের পক্ষে কাজে লাগানো, এসবই তাদের লক্ষ্যভিত্তিক আচরণের উদাহরণ। আরও চমকপ্রদ বিষয় হল সাপের ব্যক্তিত্ব। অ্যানিম্যাল কগনিশন-এ ২০২৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গার্টার সাপরা সঙ্গীর সাহসী বা সতর্ক আচরণের উপর ভিত্তি করে নিজেদের আচরণ বদলায়। অর্থাৎ সাপের আচরণ একরকম নয়, পরিস্থিতি ও সামাজিক প্রেক্ষিত অনুযায়ী তা বদলায়। সব মিলিয়ে গবেষণা বলছে, সাপের বুদ্ধিমত্তা গঠিত হয় কয়েকটি মূল স্তম্ভে : অভিজ্ঞতা থেকে শেখা, স্থানিক স্মৃতি, আচরণগত নমনীয়তা ও ব্যক্তিগত পার্থক্য। এতে মানুষের মতো আবেগের গভীরতা না থাকতে পারে, কিন্তু বিবর্তন সাপের মস্তিষ্ককে তৈরি করেছে অন্য কাজে দক্ষ হয়ে উঠতে, খাবার খুঁজে পেতে, বিপদ এড়াতে আর টিকে থাকতে। আর সেই কাজে সাপের বুদ্ধি নিঃশব্দে, কিন্তু নিখুঁতভাবে কাজ করে চলেছে।

 

সূত্র: How Smart Are Snakes Really? A Herpetologist Explains The Science Of Serpent Intelligence; By Scott Travers; Dec, 2025.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 3 =