বিশ্ব উষ্ণায়নে অন্যতম ভূমিকা জীবাশ্ম জ্বালানির। গ্লাসগোয় সদ্যসমাপ্ত ক্লাইমেট চেঞ্জিং সামিটে প্রচুর দেশের আর্তি ছিল জীবাশ্ম জ্বালানিকে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে। জাপানের ইঞ্জিনিয়াররা সেই রাস্তায় হাঁটলেন। পরীক্ষামূলকভাবে ঘূর্ণিঝড় থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেখালেন! জাপানের একাধিক শহরে ঘূর্ণিঝড় থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে এরকম বায়ুকল বসানোর পরিকল্পনা করা হয়ে গিয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ সফল হওয়ার পরই নতুন উদ্যোগের শুরু।
বায়ুবিদ্যুৎ সৃষ্টির ভাবনা জাপানে নতুন নয়। ২০১৪-র ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্ঘটনার পরই সরকার, বিজ্ঞানীরা, এমনকী প্রযুক্তিবিদরাও ভাবতে শুরু করেছিলেন বিকল্প ব্যবস্থার কথা। বিকল্প ব্যবস্থা মানে এমন এক ব্যবস্থা যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির সাহায্য ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। আৎসুসি সিমিজু নামের এক দক্ষ ও অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারের নেতৃত্বে এই সময় একটি সংস্থা তৈরি হয়, নাম চ্যালেনার্জি। সিমিজুই প্রথম বলেছিলেন বায়ুবিদ্যুতের কথা। কারণ সেই বিদ্যুৎ তৈরি করতে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এই বায়ুকলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ খুব কম হয়, তারপর ঘূর্ণিঝড়ের বেগ প্রবল হলে বায়ুকল ভেঙে পড়তে পারে। ঝড় শুরু হওয়ার আগে বায়ুকলগুলি সরানোর সময়ও পাওয়া যায় না।
অনেক ভাবনা ও পরীক্ষার পর চ্যালেনার্জির ইঞ্জিনিয়াররাই ফিলিপিন্সের বাটানেস শহরে প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে একটি বায়ুকল বসানো হয়েছিল। তার কিছুদিনের মধ্যেই ফিলিপিন্সে আছড়ে পড়েছিল টাইফুন ঘূর্ণিঝড় ফিকো। ঘন্টায় যার গতিবেগ ছিল প্রায় ২৫০ কিলোমিটার! চ্যালেনার্জির তৈরি করা বায়ুকলের সামনে এটা ছিল বড় এক চ্যালেঞ্জ। সফল হয়েছিল জাপানি ইঞ্জিনিয়ারদের পরিশ্রম। ফিকোর প্রবল ঝড়েও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল বায়ুকলটি। শুধু তাই নয়, ওই ঝড় থেকে সে ১১ কিলোওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ তৈরি করে ফেলে!
জাপানের আবহাওয়া দফতরের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী জাপানে বছরে অন্তত ২৬ থেকে ২৭টি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে। যার মধ্যে ৩ থেকে ৪টি থাকে ভয়ঙ্কর টাইফুন। তাই একাধিক শহরে বায়ুকল বসাতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে জাপানে একাধিক বায়ুকল থেকে ঘূর্ণিঝড় চলাকালীনই প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।